সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুর্নীতির অভিযোগে আরও বিপাকে পাকিস্তানের অপসারিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। বিপাকে তাঁর কন্যা মারিয়ম ও জামাতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা ক্যাপ্টেন মহম্মদ সফদারও। এমনকী, দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের জেলে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না ওয়াকিবহাল মহল। সেক্ষেত্রে পাক রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব আরও বাড়তে পারে। ফাঁস হয়ে যাওয়া পানামা পেপারস অনুযায়ী, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি রয়েছে শরিফ ও তাঁর পরিবারের। অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে বিদেশে বেনামে প্রচুর সম্পত্তি করেছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার শরিফ, তাঁর মেয়ে-জামাইয়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করল পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন আদালত। এরপর নওয়াজ গ্রেপ্তারও হতে পারেন।
চলতি বছরের জুলাইতে ৬৭ বছরের নওয়াজ পাক প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। তার আগে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে জানায়, ওই পদে থাকার যোগ্যতা তাঁর নেই। কারণ, নওয়াজের আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনও স্বচ্ছতা ছিল না। এর পরেই তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যান। তবে ক্ষমতায় থাকা পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের উপর পুরো নিয়ন্ত্রণই রেখে চলছিলেন। নিজের ঘনিষ্ঠকেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে বসিয়ে দিয়েছেন। শরিফের মতোই অভিযুক্ত পাক অর্থমন্ত্রী ইশফাক দার। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদের দুর্নীতি দমন আদালতে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এ দিন নওয়াজ, তাঁর কন্যা মারিয়ম, জামাই সফদর–তিন জনের বিরুদ্ধেই আদালত চার্জ গঠন করেছে। তিন অভিযুক্তই নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। মারিয়ম এবং তাঁর স্বামী হাজির ছিলেন। নওয়াজ যদিও নিজে হাজির থাকতে পারেননি, প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। স্ত্রী কুলসুম ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। ইতিমধ্যে তাঁর তিনটি অস্ত্রোপচারও হয়েছে। তাঁর কাছেই আপাতত রয়েছেন নওয়াজ। ছিলেন না তাঁর প্রধান আইনজীবী খোওয়াজা হ্যারিসও। ইতিমধ্যে ইশফাক দারের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্য দু’টি মামলায় শরিফ ও তাঁর দুই পুত্র হাসান-হুসেনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হতে পারে। তবে ব্রিটিশ পাসপোর্টের উল্লেখ করে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকার করেছেন শরিফ-পুত্ররা।
শরিফ ও তাঁর আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় চার্জ গঠন স্থগিত করার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত আরজি খারিজ করে দেয়। দুর্নীতি দমন শাখার অভিযোগের বিরুদ্ধে শরিফ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তার রায় বেরনো না পর্যন্ত চার্জ গঠন মুলতুবির আর্জি জানান শরিফের আর এক আইনজীবী। আদালত তাতেও কান দেয়নি। তবে সমস্ত অভিযোগ একত্রিত করে একটি মামলা চালানো যায় কি না, সে বিষয়ে আদালত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। শরিফ পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক কারণে তাঁদের ফাঁসাতে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতের বাইরে মারিয়ম বলেন, “প্রথমে রায় দেওয়া হল (শরিফকে সরানো)। তারপর বিচার। এই প্রথম এমন ঘটনা দেখলাম। অবিচার, স্বেচ্ছাচারিতা একসঙ্গে চলতে পারে না।” মারিয়ম যাই বলুন না কেন, পাক সেনার সঙ্গে শরিফের সম্পর্ক মোটেও মসৃণ নয়। আদালত কড়া অবস্থান নেওয়ায় তাঁর রাজনৈতিক জীবন এখন ঘোর সংকটে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.