কুণাল ঘোষ এবং কিংশুক প্রামাণিক (লন্ডন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): ভিড়ে ঠাসা প্রেক্ষাগৃহ। তাঁর দিকে তাকিয়ে বিশ্বের ঐতিহ্য়বাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাবড় মেধাবী পড়ুয়ারা। তাঁদের সামনেই ধেয়ে এল চোখা-চোখা প্রশ্নবাণ। প্রশ্ন উঠল, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে। সেই সমস্ত প্রশ্নের নেপথ্যে কোন ‘কূট’ সমীকরণ রয়েছে তা সহজে ধরা পড়েছিল দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) চোখে। জবাবে সাফ বুঝিয়ে দিলেন, গণতন্ত্রে বিরোধ থাকবেই। কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধের আগে দেশ। আর এই উত্তরই তাঁকে আলাদা করে দেয় দেশের আর পাঁচজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের থেকে। দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা থেকে অর্থনীতি-বিভিন্ন বিষয় বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে মোদি সরকারের সমালোচনা করতে শোনা গিয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে। এমনকী, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন কংগ্রেসের যুবরাজ বলেও অভিযোগ। কিন্তু সেই ‘কূট’ বিষয়েই মমতা বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি বাকিদের থেকে আলাদা। কীভাবে বিশ্বমঞ্চে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দেশের ছবি তুলে ধরতে হয়, তা বুঝিয়ে দিলেন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজের প্রেক্ষাগৃহ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একক বক্তৃতার (Speech) পর দুই সঞ্চালকের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল। সেখানেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, “ভারতের অর্থনীতি ব্রিটেনকে ছাপিয়ে গিয়েছে। ভারত পঞ্চম স্থানে আর ব্রিটেন ষষ্ঠ। খুব তাড়াতাড়ি তৃতীয়তে পৌঁছে যাবেন। আর আমাদের গবেষণা বলছে, ২০৬০-তে শীর্ষে চলে যাবে।” উত্তরে মমতা বলেন, “আমি একমত নই। অনেক বিষয় আছে যেগুলো এখানে বলা যাবে না। তবে এটা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিদেশমন্ত্রকের বিষয়। আমি কিছু বলব না।” তাঁর আরও সংযোজন, “তবে কোভিডের পর প্রত্যেক দেশই সমস্যায় পড়েছে। বিশ্বজুড়ে যদি অর্থনৈতিক যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে কী করে জানবেন, উন্নতি হবে কি না! আমরা শুধু আশা রাখতে পারি যেন আমরা উন্নতির দিকেই এগিয়ে যাই।” মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, “ভারতের ভবিষ্যৎ কী?” জবাবে তিনি বলেন, “ভারতের ভবিষ্যৎ কী, সেটা বলার এক্তিয়ার আমার নেই। আমার দেশ ভালোভাবে উঠে দাঁড়াক। আপনাদের দেশও উন্নতি করুক। আমরা প্রত্যেকেই দায়িত্ববান হই।”
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে আমেরিকা সফরে রাহুল গান্ধী ভারতে গণতন্ত্র বিপন্ন বলে মন্তব্য করেছিলেন। বিজেপির দাবি, ভারতীয় গণতন্ত্রকে বাঁচাতে আমেরিকার হস্তক্ষেপ দাবি করেছিলেন রাহুল। এনিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। এমনকী, ইউরোপ সফরেও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুই জবাবের মধ্যে দিয়ে মমতা বুঝিয়ে দিলেন তিনি ঠিক কতটা পরিণত রাজনীতিবিদ। যেখানে জাতীয়স্তরের অন্য়তম প্রধান রাহুল গান্ধী বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন সরকারের মুণ্ডপাত করেন। বিদেশি শক্তির সাহায্য় চেয়ে জাতীয়তাবাদীদের তোপের মুখে পড়েন। সেখানে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, গণতন্ত্রে বিরোধিতা থাকবেই। থাকবে মতপার্থক্যও। বহুত্ববাদই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু সেটা দেশের অন্দরে। কখওনই দেশের সীমা পার করবে না। বিদেশের মাটিতে সবসময় প্রাধান্য পাবে দেশ। সেখানে সবাই একজোট। তাই ‘কূট’ প্রশ্নের জবাবে তাঁর একটাই উত্তর, “এটা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিদেশমন্ত্রকের বিষয়। আমি কিছু বলব না।” পরোক্ষে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বুঝিয়ে দিলেন, রাজনৈতিক মঞ্চে বিভেদ থাকবেই। রাজনীতির দুনিয়া লড়াই হবে। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশ। আর ঠিক এখানে রাহুল গান্ধীর থেকে অনেক যোজন এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.