সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফের আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ পুড়ল মায়ানমারের। এবার সু কি সরকারের নিন্দায় মুখর হলেন তিন নোবেলজয়ী নারী। রোহিঙ্গাদের নির্মূল করতে গণহত্যা চালাচ্ছে নাইপিদাও। এমনটাই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ইরানের শিরিন ইবাদি, ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান এবং আমেরিকার মেরেইড ম্যাগুয়ার।
[রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উপর অত্যাচার, শুনে কেঁদে ফেললেন দুই নোবেলজয়ী]
বুধবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন এবাদি, কারমান ও ম্যাগুয়ার। উদ্বাস্তুদের চরম দুর্দশা দেখে কার্যত হতবাক হয়ে যান আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ওই তিন নারী। এদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেন তাঁরা। সু কি সরকারকে তুলোধোনা করে তাঁরা বলেন, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করতে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে বার্মিজ সেনা। এই নৃশংস হত্যালীলার দায় নিতে হবে মায়ানমার সরকারকে।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এহসানুল করিম জানান, মরিয়েড মুগুয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি দেখে টানা গভীরভাবে শোকাহত। রাখাইনের ঘটনাকে গণহত্যা বলেন ম্যাগুয়ার। এই নারকীয় ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলের উদাসীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। মানবিক কারণে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তাকে ‘কাইন্ড মাদার’ হিসাবে বর্ণনা করেন ১৯৭৬ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া ম্যাগুয়ার।
২০১৭-র ২৫ অগাস্ট রাখাইনে জঙ্গিদমন অভিযান শুরু করে বার্মিজ সেনা। অভিযোগ, ওই অভিযানে নিশানা করা হয় নিরীহ রোহিঙ্গাদের। ফলে ছয় মাসে প্রায় সাত লক্ষ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। এছাড়াও গত কয়েক দশকে আসা আরও প্রায় চার লক্ষ শরণার্থীর ভার বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
[জঙ্গি হামলায় রোহিঙ্গা-যোগ দেখছেন জম্মুর স্পিকার, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা]
বাংলাদেশ সফররত নোবেল বিজয়ী তিন নারী কক্সবাজারের উখিয়ায় দুটি আশ্রয় শিবির ঘুরে রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে হত্যা, ধর্ষণের ভয়াবহ বিবরণ শোনেন। আরব বসন্তের দিনগুলোতে ইয়েমেনের বিপ্লবের প্রতীক হয়ে ওঠা সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী তাওয়াক্কুল কারমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, রাখাইনে যা ঘটছে, তার দায় মায়ানমার সরকারকে অবশ্যই নিতে হবে।রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের যে খবর প্রচার মাধ্যমে আসছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহতা সেখানে ঘটেছে। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে মায়ানমার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.