সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একের পর এক গ্রাম। আতঙ্ক গ্রাস করেছে সকলকে। এলাকার সব হাসপাতালে উপচে পড়ছে ভিড়। চারপাশে ত্রাহি ত্রাহি রব। বিভীষিকার নাম – এইচআইভি। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, দক্ষিণ পাকিস্তানের ৪০০-এরও বেশি মানুষ এইচআইভি আক্রান্ত। এদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মার্চ মাসে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা অঞ্চল লাগোয়া ওয়াসাও গ্রামে কয়েকজন প্রথমে এইচআইভি আক্রান্ত হন। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আক্রান্তের সংখ্যা। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়েই স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এলাকার লোকজন।
কিন্তু হঠাৎ কেন এভাবে ছড়িয়ে পড়ল এইচআইভি? গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এলাকার কয়েকজন চিকিৎসকের গাফিলতির জেরেই এই ঘটনা। জানা গিয়েছে, শিশুদের টীকাকরণ বা মহিলাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার সময়ে একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করেন ওই এলাকার চিকিৎসকেরা। একই সিরিঞ্জ দিয়ে অনেকের শরীরে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়৷ আর সেই কারণেই এইচআইভি-র জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে তাঁদের শরীরে। হু হু করে বাড়তে থাকে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা।
এ প্রসঙ্গে এলাকার বাসিন্দা মুক্তার পারভেজ জানান, ‘‘আমার মেয়ের জ্বর হয়েছিল। রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেল এইচআইভি পজিটিভ। কী করে এমন হলো বুঝতে পারছি না।’’ একই অবস্থা নিশাল আহমেদেরও। তাঁর এক বছরের শিশুকন্যা এইচআইভি আক্রান্ত। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘‘গ্রামে রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে হাতুড়ে ডাক্তাররা। তাদের গাফিলতিতেই এই পরিণতি। ঘরে ঘরে আক্রান্ত শিশুরা।’’
দেশজুড়ে এইচআইভি সংক্রমণের বিষয়টি শিকার করে নিয়েছে পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তাদের তরফেও হাতুড়ে ডাক্তারদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। তাদের প্রশ্ন কীভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নজর এড়িয়ে প্রতিটি গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলে বসেছেন হাতুড়ে ডাক্তাররা? কেনই বা এত কিছু জেনেও প্রশাসন চুপ করেছিল কেন?
আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে পাকিস্তানে ২০ হাজার মানুষ এইচআইভি সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। এইচআইভি সংক্রমণে বিশ্বের মধ্যে পাকিস্তানের স্থান দ্বিতীয়। পাক স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, এই মুহূর্তে গোটা দেশে প্রায় ৬ লক্ষ হাতুড়ে ডাক্তার রয়েছেন। শুধু মাত্র সিন্ধু প্রদেশেই সংখ্যাটা আড়াই লক্ষের বেশি।
‘সিন্ধ এইডস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর অধিকর্তা সিকন্দার মেননের কথায়, ‘‘অর্থ বাঁচানোর জন্য এই হাতুড়ে চিকিৎসকরা একটাই সিরিঞ্জ বহু মানুষের শরীরে ব্যবহার করছেন।’’ করাচির আগা খান ইউনিভার্সিটির গবেষক বুশরার দাবি, ‘‘একই সিরিঞ্জের বার বার প্রয়োগ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়া রক্তদান, লাইসেন্স ছাড়াই বা ভুয়ো লাইন্সেসে হাতুড়েদের চিকিৎসা পদ্ধতি, এই সব কিছুই এই অবস্থার জন্য দায়ী। এটা একদিনের ঘটনা নয়, দিনের পর দিন এই অন্যায় চলে আসছে পাকিস্তানে।” সবমিলিয়ে, এইডস প্রায় মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ পাকিস্তানে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.