কৃষ্ণকুমার দাস: পরিবেশ দূষণ রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সবুজশ্রী’ প্রকল্পের গুরুত্ব বিশেষভাবে প্রশংসিত হল ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের বিশ্ব মহানাগরিক সম্মেলনে। কারণ, একটি গাছ শুধুমাত্র পরিবেশে অক্সিজেনের জোগান দেয় না, উপরন্তু একটি পরিবারকে ভবিষ্যতে স্বনির্ভর হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে দেয়। বস্তুত এই ভাবনা থেকেই শিশু জন্ম নেওয়া মাত্রই মুখ্যমন্ত্রীর চালু প্রকল্পের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সেই পরিবারকে একটি মেহগনি গাছ দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার বিশ্ব মহানাগরিক সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবেশ দূষণ রোখার পাশাপাশি পরিবারকে সাহায্য করার ‘সবুজশ্রী’ প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন কলকাতার মেয়র ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফিরহাদ বাম সরকারের আমলে জলাভূমি ধ্বংসের তথ্য তুলে ধরে বলেন,“আগে পশ্চিমবঙ্গে জলাভূমি ধ্বংস হলেও এখন মাত্র আট বছরে প্রায় ২ লক্ষ পুকুর খনন বা সংস্কার করা হয়েছে। রাজ্য জুড়ে ২ লক্ষের বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। আর সবুজশ্রী প্রকল্প চালু করে মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে শুধুমাত্র পরিবেশ সচেতন করেননি, স্বনির্ভর হওয়ার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন।” সম্মেলনে আসা আর্থিকভাবে দুর্বল দেশগুলির মহানাগরিকরা পশ্চিমবঙ্গের সীমিত বাজেটে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ এবং জল সংরক্ষণের প্রকল্প নিয়ে যথেষ্ট কৌতুহল দেখিয়েছেন। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েও সম্মেলনে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার দেশের মেয়ররা তীব্র সমালোচনা করেন। একইসঙ্গে ধনী দেশগুলির জন্যই যে বায়ু ও জলদূষণ বাড়ছে বলে অধিবেশনে তোপ দেগেছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি। কলকাতার মেয়র এদিন ডেনমার্ক থেকে দাবি করেন, আন্তর্জাতিক এই মহাসম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রাক্তন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরেও স্বীকার করেছেন তাঁদের মতো ধনী দেশগুলির জন্যই বিশ্বে দূষণ বাড়ছে। উলটোদিকে ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ কিভাবে স্বল্পবাজেটে পরিবেশ সংরক্ষণ করছে তা রাষ্ট্রের পক্ষে তুলে ধরেন পশ্চিমবঙ্গের পুরমন্ত্রী।
কোপেনহেগেন থেকে রাতে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে টেলিফোনে ফিরহাদ জানান, “অধিবেশনে বক্তব্য শেষ করে নিচে আসতেই তৃতীয় বিশ্বের অনেক শহরের মেয়ররা এসে ‘সবুজশ্রী’ প্রকল্পের বিস্তারিত জানতে চান। একটি শিশু জন্মানো মাত্র একটি করে মেহগনি গাছ দিচ্ছেন এবং ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর ওই গাছটার মূল্য ১৮ লাখ টাকা হবে। অভিনব এই ফর্মূলা দিয়ে যে পরিবেশ সংরক্ষণ ও গরিবকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা যায় তা গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিলেন মমতা বন্দে্যাপাধ্যায়। প্রকল্পটি এদিন আমি তুলে ধরেছি ঠিকই কিন্তু আসলে কোপেনহেগেনের এই বিশ্ব মঞ্চে আজ মমতাদিরই জয়জয়কার শুনলাম। তৃতীয় বিশ্বের অনেক মেয়রই পরিবেশ ও গরিবকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রীর সবুজশ্রী প্রকল্প অনুকরণের আগ্রহ দেখিয়েছেন।”
সীমিত বাজেটে কীভাবে পরিবেশ দূষণ রোধ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শহরকে আরও সুরক্ষিত ও ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি’ করা যায় তাও অধিবেশনে তুলে ধরেন কলকাতার মেয়র। গত আট বছরে ‘জল ধরো, জল ভরো’ এবং গ্রিন ক্যালকাটা ও ক্লিন ক্যালকাটা-র মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা পরিবেশমুখী প্রকল্পও এদিন তথ্য দিয়ে পরিবেশন করেন তিনি। একজন মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ও জল সংরক্ষণের সমর্থনে জনসচেতনতা গড়তে যে রাস্তায় নেমে দীর্ঘপথ পদযাত্রা করেন তা শুনে সি-৪ সম্মেলনে আগত অন্য শহরের মেয়ররা বিস্মিত হয়েছেন বলেও দাবি করেন ফিরহাদ। আজ শনিবার ফিরহাদ যাচ্ছেন নেদারল্যান্ডে ‘জল ধরো, জল ভরো’ কর্মসূচিতে। প্যারিসে মেয়রের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক সেরে কলকাতা ফিরবেন ১৭ অক্টোবর সকালে। এদিন ঢাকার মেয়রের সঙ্গে একটি মউ সাক্ষর করেন কলকাতার মেয়র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.