সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নীল সাগরের মধ্যিখানে একটুকরো জমি৷ এক্কেবারে নিজের৷ কড়ি দিয়ে কেনা৷ আইন ভাঙা ছাড়া সেখানে আপনি যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারেন৷ হয়ে যেতে পারেন ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ (আর যদি গোটা কয়েক আইন ভেঙেও ফেলেন তাহলেও কেউ দেখতে যাচ্ছে না)৷ সাধারণ মানুষের কাছে এমন একটি জায়গা স্বপ্ন হতে পারে৷ কিন্তু, বিশ্বের বিলিওনেয়ার, মাল্টিমিলিওনেয়াররা এমন দ্বীপ আকছার কেনাবেচা করছেন৷ প্রতি বছর তাঁদের জন্য নিয়ম করে ক্রয়তালিকাতেও ঢুকছে নিত্যনতুন দ্বীপের নাম৷ সম্প্রতি এমনই একটি দ্বীপসমষ্টি, একত্রে যার নাম ফাফু, বেশ চিন্তায় ফেলেছে ভারতকে৷
ফাফু মালদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত৷ ভারতের পড়শি এই দ্বীপরাষ্ট্র বরাবরই ভারতের সঙ্গে একটু তফাত রেখে চলে৷ ভারতও যে তাদের খুব একটা কাছে টানেনি তার প্রমাণও রয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বহু দেশ ঘুরেছেন মোদি৷ কিন্তু, মালদ্বীপে সফর করেননি৷ এহেন পড়শি রাষ্ট্রের দ্বীপ ফাফু কিনতে চলেছেন সৌদি আরবের রাজা সলমন বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ৷ ব্যক্তিগত দ্বীপ হিসাবে নয়৷ নিজের সৌদি আরবের সরকারের হয়ে মালদ্বীপের ওই দ্বীপসমষ্টি কিনতে চলেছেন তিনি৷ অর্থাত্ এই কেনাবেচার বিষয়টি সফল হলে ভারতের একেবারে ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলবে সৌদি আরব৷ কেন না, তাদের দেশেরই একটি খণ্ড সেক্ষেত্রে থাকবে ভারতের সীমার খুব কাছে৷ আর এখান থেকেই শুরু সমস্যার৷ দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবেই উদ্বিগ্ন হচ্ছে নয়াদিল্লি৷
সৌদির রাজার দ্বীপ কেনার সিদ্ধান্তে অবশ্য ভারতের কিছুই করার নেই৷ তবে, গন্ডগোল বেধেছে মালদ্বীপ তাদের নিজস্ব দেশের একটি ভূখণ্ড অন্য একটি রাষ্ট্রকে বেচতে চাওয়ায়৷ প্রশ্ন উঠেছে আদৌ কি কোনও দেশ তাদের ভূখণ্ড কিংবা সীমার অন্তর্ভুক্ত একটি দ্বীপ বা দ্বীপসমষ্টিকে অন্য দেশের সরকারকে বিক্রি করতে পারে? সেক্ষেত্রে ক্রেতা দেশটি কি ওই ভূখণ্ডে নিজের আইন চালু করবে? না কি তাদের উপর বিক্রেতা দেশটির কোনও বিধিনিষেধ আরোপিত হবে? এধরনের ঘটনা পৃথিবীতে আগে কখনও হয়নি বলেই অনুমান৷ আর তার জন্যই নজিরবিহীন এই বিষয়টি নিয়ে আরও দ্বন্দ্ব বাড়ছে৷
ফাফু আসলে মালদ্বীপের বেশ কিছু প্রবালদ্বীপের সমষ্টি৷ এটি একইসঙ্গে মালদ্বীপের একটি প্রশাসনিক বিভাগও৷ ২৩টি ছোট ছোট দ্বীপের সমষ্টি ফাফুর জনসংখ্যা সাড়ে চারহাজারের কাছাকাছি৷ তবে কিছু দ্বীপে বসতি থাকলেও বাকি দ্বীপগুলি জনহীন৷ এহেন একটি দ্বীপ হঠাত্ সৌদি আরব কিনে নিলে তাদের বাসিন্দাদের কী হবে? প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও৷ প্রসঙ্গত, অন্যান্য দেশ বিভিন্ন দেশের শিল্পপতি, টেনিস তারকা, শিল্পী কিংবা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দ্বীপ বিক্রি করলেও মালদ্বীপ এতদিন তা করতে পারত না৷ মালদ্বীপের বিরোধী গোষ্ঠী এমডিপি জানাচ্ছে, ওয়াহাবি নিয়ম অনুযায়ী দেশের ভূখণ্ড বিদেশি হাতে তুলে দেওয়া ছিল মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতো অপরাধ৷ কিন্তু, ২০১৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে ওই নিয়ম বদলানো হয়৷ আর বর্তমান আবদুল্লা ইয়ামিনের সরকার এ ব্যাপারে দেশের মানুষের রায় নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না৷ এমডিপি আরও জানিয়েছে, প্রতিবছর অন্তত ৩০০ ছাত্রের স্কলারশিপ আসে সৌদি থেকে৷ মালদ্বীপের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে সেটিও তাৎপর্যপূর্ণ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.