সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যে দেশে এতদিন নিশ্চিন্তে আত্মগোপন করেছিল, এবার সেই মালয়েশিয়া থেকেই বিতর্কিত ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েককে বহিষ্কারের দাবি উঠল৷ এবং এই দাবি তুললেন খোদ সে দেশের মানবসম্পদ মন্ত্রী৷ সেদেশে বসবাসকারী হিন্দুদের নিয়ে ধর্মীয় উসকানিমূলক মন্তব্য করায় জাকিরকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন এম কুলাসেগারান। সাফ জানালেন, তিনি নিজে দেশের মন্ত্রিসভার কাছে এই প্রস্তাব দিয়েছেন৷
[ আরও পড়ুন: ‘কাশ্মীর আমাদের ছিল না, হবেও না’, সাফ কথা পাকিস্তানি ইমামের]
কী বলেছেন জাকির নায়েক? জানা গিয়েছে, মালয়েশিয়ার কোটাবারুতে একটি সভায় ভারতের মুসলমানদের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী হিন্দুদের তুলনা টানে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত ওই ধর্মপ্রচারক। জানায়, ‘‘ভারতে মুসলমানরদের তুলনায় মালয়েশিয়ায় হিন্দুরা দ্বিগুণ সুযোগ-সুবিধা পায়। এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহাথীর মহম্মদের তুলনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেশি অনুগত এখানের হিন্দুরা।’’ সূত্রের খবর, তার এই মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কের ঝড় ওঠে৷ সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে সরব হন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান৷ তিনি সাফ জানান, “মালেশিয়ায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকেন। তাদের মধ্যে বিভেদ ছড়াচ্ছে জাকির নায়েক। আর্থিক কেলেঙ্কারী ও জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মদতের অভিযোগে ভারত থেকে পালিয়েছে সে৷ মালয়েশিয়ায় আত্মগোপন করে রয়েছে৷ এবার ওঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সময় এসেছে।’’
একই ইস্যুকে জাকিরকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার ন্যাশানল পেট্রিওটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দাতুক মহম্মদ আরশাদ রাজি৷ তিনি জানান, ‘‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়দের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে আসার চেষ্টা করছে জাকির নায়েক৷ তবে এই ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলার কোনও অধিকারই নেই ওর৷’’
[ আরও পড়ুন: এবার আফগান ‘মাদক বাদশাহ’র সঙ্গে জুটি দাউদের, উদ্বিগ্ন প্রশাসন ]
প্রসঙ্গত, ২০১৬-তে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছিল বিতর্কিত এই ইসলাম ধর্মপ্রচারকের৷ ‘পিস টিভি’-তে নায়েকের বিদ্বেষমূলক ভাষণ শুনেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল ওই হামলার সঙ্গে যুক্ত দুই জঙ্গি৷ তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল ভারত৷ তদন্তে সামনে আসতে থাকে একের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ প্রকাশ্যে আসে সন্ত্রাসবাদে মদতদাতা এই স্বঘোষিত ধর্ম প্রচারকের একের পর এক কুকীর্তি৷ ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে তার প্রতিষ্ঠিত সংস্থা কীভাবে সন্ত্রাসীদের অর্থ সাহায্য করত তা প্রকাশ্যে আসে৷ কেবল অর্থ সাহায্যই নয়, জেহাদি কাজকর্মের হাতেখড়ি দেওয়া হত তার সংস্থায়৷ এরপরই, পিস টিভি ও ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার৷ নায়েককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত, বাংলাদেশ, ব্রিটেন-সহ একাধিক দেশ৷ এরপর থেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় নায়েক৷ বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আত্মগোপন করেছে সে৷ তাকে দেশে ফেরানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছে বিদেশমন্ত্রক৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.