সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ন’বছর আগে তালিবানি বুলেটে খসে পড়েছিল মাথার খুলির একাংশ। সেই অংশটি সযত্নে রেখে দিয়েছেন নিজের বইয়ের তাকে। মনে কিন্তু সেই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতিটুকু ধরে রাখেননি। বছর চব্বিশের মালালা ইউসুফজাই (Malala Yousafzai)। নোবেলজয়ী সমাজকর্মী, নারী শিক্ষাকর্মী, শান্তিকামী। এমনই আরও বহু পরিচয় রয়েছে তাঁর। লড়াকু নারী হিসেবে অনেকেরই অনুপ্রেরণা মালালা। আজ, মালালার প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান (Afghanistan) যখন তালিবানের দাপটে কাঁপছে, সেসময় ৯ বছর আগেকার সেই খুলির টুকরো ঘুরিয়েফিরিয়ে দেখছেন সেদিনের কিশোরী।
২০১২ সালে পাকিস্তানের (Pakistan) খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে বুলেটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল নোবেলজয়ীর মস্তিষ্কের বাঁ দিকের অংশ। একসময় তো পুরোপুরি অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছিলেন মালালা। ২০১২-তে বাসে তালিবানি হামলার মুখে পড়া মালালাকে তাই ফোন করতে হয়েছিল সেই বন্ধুকে, যিনি ঘটনার দিন বসেছিলেন তাঁরই পাশে। মালালার উপর হওয়া হামলার প্রত্যক্ষদর্শী তো তিনিই ছিলেন। ‘পোডিয়াম’-এ প্রকাশিত ব্লগ পোস্টে সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন এই পাক যুবতী। আর সেখানেই ব্যক্ত করেছেন বর্তমানে আফগানিস্তানে তালিবানি (Taliban) দখল নিয়ে নিজের উদ্বেগ-যন্ত্রণার কথাও।
Nine years after being shot, I am still recovering from just one Taliban bullet. Read more: https://t.co/wrnJIEW06G pic.twitter.com/gd4oow1WIE
— Malala (@Malala) August 24, 2021
মালালার লেখা অনুযায়ী, দিন কয়েক আগে তিনি ফোন করে বন্ধুর কাছে জানতে চান, ২০১২ সালের সেই অভিশপ্ত দিনে বন্দুকধারী তালিবানের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি কী করেছিলেন? চিৎকার করে উঠেছিলেন নাকি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন? উত্তরে সেই বন্ধু জানান, “না। তোমার নাম ধরে যখন ওরা ডাকল, তুমি শান্ত এবং স্থির হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলে, তালিবানের চোখে চোখ রেখে। পালাওনি। আর আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছিলে। এতটাই যে বহুদিন সেই ব্যথা আমার হাতে রয়ে গিয়েছিল।” শুধু তাই নয়, ওই বন্ধু আরও জানিয়েছেন, “ওরা তোমার সামনে বন্দুক উঁচিয়ে ধরল। তুমি নিজের দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললে, তারপর নিচু হওয়ার চেষ্টা করলে। কিন্তু এক সেকেন্ড পরেই গুলির আওয়াজ হল, আর তুমি রক্তাক্ত অবস্থায় আমার কোলে এসে লুটিয়ে পড়লে।”
ঘটনার সময় ১৫ বছর বয়স ছিল মালালার। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে পেশোয়ারের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ডাক্তাররা অস্ত্রোপচার করে তার বাঁ দিকের ‘টেমপোরাল স্কাল বোন’ সরিয়ে দেন। এতেই তার প্রাণরক্ষা হয়। তারপর ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হলে মালালাকে এয়ারলিফ্ট করে ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই দীর্ঘ চিকিৎসা চলে। চিকিৎসকরা তাঁর স্কাল বোনের জায়গায় টাইটেনিয়ামের পাত বসিয়ে দেন। আর স্কাল বোনের রয়ে যাওয়া অংশটুকু, যা পাক চিকিৎসকরা সরিয়ে তাঁর পেটে চালান করেছিলেন, এখন ঠাঁই পেয়েছে মালালার বাড়ির বইয়ের তাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.