সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লেবাননে রাজনীতিবিদ ও দুর্নীতির সহাবস্থান নতুন কিছু নয়। সরকারের বিরুদ্ধে তা নিয়ে বরাবর আওয়াজও তুলেছে জনতা। তবে কয়েকদিন আগে পর্যন্ত পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রেসিডেন্ট মিখেল আউনের। কিন্তু বেইরুটের বিস্ফোরণে সেই রাশ অনেকটাই আলগা। বৃহস্পতিবার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর লেবানন সফরেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
মঙ্গলবার বেইরুট (Beirut) বন্দরে ঘটা বিস্ফোরণের শব্দে প্যারিসও যে চমকে উঠেছিল তা বলাই বাহুল্য। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই লেবাননের শাসনভার ছিল ফ্রান্সের হাতে। ১৯৪৩ লেবাননের স্বাধীনতার পরও দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে প্যারিস। বেইরুটের রাজনীতির অন্দরমহলে এখনও প্রভাব রয়েছে ফরাসি নীতিনির্ধারকদের। ফলে বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিধ্বস্ত বন্দরটিতে যান প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ। সেখানে তাঁর সামনেই, শাসকদের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দেয় জনতা। ‘বিদ্রোহ’, ‘পরিবর্তন’, ‘দুর্নীতিমুক্তি’র স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। অনেকেই অভিযোগ জানান, দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদের জন্য বেইরুটের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। প্রশাসনের গাফিলতির জন্যই প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৭ জন মানুষ। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। পরিস্থিতি সামাল দিতে লেবাননের শাসনতন্ত্রে বদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন ফরাসি রাষ্ট্রপতি। তিনি সাফ জানিয়েছেন, লেবাননের উন্নতির জন্য ‘নতুন রাজনৈতিক পরিকাঠামো’র প্রয়োজন। বিস্ফোরণে আন্তর্জাতিক স্তরে তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া, ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরও জানিয়েছেন, দেশটির জন্য আর্থিক মদত দেওয়া হবে। তবে এর জন্য দেশের শাসকদের নিজেদের ভুলভ্রান্তি শুধরে নিতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিখেল আউনের উপর ক্ষুব্ধ ফ্রান্স (France)। আগেও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাই এবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবেই মসনদে অন্য কাউকে বসানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। দেশটিতে দুর্নীতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ম্যাক্রঁ বলেছেন আগামী দিনে ত্রাণ সামগ্রী সরাসরি ময়দানে নেমে যারা কাজ করছেন তাঁদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেবনিকেশও খতিয়ে দেখার কথা বলেন তিনি। উল্লেখ্য, প্রায় ২,৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ফেটে গত মঙ্গলবার বেইরুট বন্দরে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়। সার ও বোমা তৈরির জন্য ব্যবহৃত এই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক গত ৬ বছর ধরে বন্দরের গোদামে মজুত করা ছিল। তাও আবার কোনও সুরক্ষাবিধি না মেনেই। যা নিয়ে প্রশাসনিক গাফিলতি প্রকট হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.