সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে। বিখ্যাত এই গানের লাইনকে চলতি বছরে বাস্তবায়িত করেছেন একঝাঁক ভারতীয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন তাঁরা। শুধু সম্মান অর্জনই নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস লেখা হয়েছে তাঁদের হাতেই। রাজনীতি থেকে শুরু করে গ্ল্যামার দুনিয়া, বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন ভারতীয়রা। সেই তালিকায় যেমন রয়েছেন ঋষি সুনাকের মতো ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিত্ব, তেমনই রয়েছেন নোরা ফতেহির মতো বিদেশিনী, যিনি ভারতের মাটিতেই নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছেন। বছর জুড়ে ভারতীয়দের দাপটের মধ্যে বেছে নেওয়া হল কয়েকজনকে, যাঁদের কৃতিত্বে উজ্জ্বল হয়েছে দেশের নাম।
ঋষি সুনাক: (Rishi Sunak) আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ২০২২ সালের সবচেয়ে আলোচিত নাম। প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম অশ্বেতাঙ্গ হিসাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে বসেছেন তিনি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ইস্তফার পরে প্রধানমন্ত্রিত্বের সেরা দাবিদার হিসাবে তাঁরই নাম উঠে এসেছিল। কিন্তু জনতার রায় তাঁর বিরুদ্ধে যায়। জনমোহিনী নীতিতে মানুষের মন জয় করে প্রধানমন্ত্রী হন লিজ ট্রাস। কিন্তু নিজের ভুল নীতিকে স্বীকার করে এক মাসের মধ্যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা উপলব্ধি করেন, কঠোর হলেও ঋষির নীতিতেই উন্নতি করবে দেশ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন ভারতের জামাই ঋষি সুনাক। ইনফোসিস কর্তা নারায়ণ মূর্তির জামাই ঋষির হাতেই ব্রিটেনে শুরু হল নয়া অধ্যায়।
পরাগ আগরওয়াল: (Parag Agarwal) ভারতে পড়াশোনা শেষ করে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেন। ২০২১ সালে টুইটারের সিইও পদে নিযুক্ত হন তিনি। তারপর থেকেই মাইক্রো ব্লগিং সাইটের গ্রাহকদের সুবিধার্থে একাধিক পদক্ষেপ করেছেন তিনি। প্রকাশ্যে আসে, টুইটার কিনতে চলেছেন বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি এলন মাস্ক। পরাগের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে সেই সময় থেকেই। সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অক্টোবর মাসে টুইটার কিনে ফেলেন মাস্ক। সিইও পদে বসেই মাস্ক পরাগকে ছেঁটে ফেলেন প্রথমেই। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। যার পরিমাণ প্রায় ৪.২ কোটি মার্কিন ডলার। বছরের শেষে ব্যর্থ হয়েও নেটিজেনদের মনে দাগ কেটেছেন পরাগ আগরওয়াল।
নোরা ফতেহি: (Nora Fatehi) বেলি ডান্সার হিসাবে ভারতে প্রবল জনপ্রিয় নোরা ফতেহি। জন্মসূত্রে মরোক্কান হলেও, বিশ্বের দরবারে ভারতীয় হিসাবেই পরিচিত তিনি। ভারতের নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছেন তিনি। প্রথম ভারতীয় হিসাবে ফিফা বিশ্বকাপের থিম সংয়ে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কাতার বিশ্বকাপের থিম সংয়ে নাচে-গানে নোরার উজ্জ্বল উপস্থিতি। ফুটবলের ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর ফাইনালেও পারফর্ম করেছেন নোরা। ফুটবল বিশ্বকাপের সঙ্গে ভারতের নাম জুড়ল বলিউডের আইটেম গার্লের হাত ধরেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার কথা থাকলেও তা অবশ্য হয়নি। ফ্যান ফেস্টিভ্যালে অবশ্য পারফর্ম করেন তিনি।
আকাশ আম্বানি: (Akash Ambani) ধনকুবের মুকেশ আম্বানির পুত্র হিসাবে ভারতে যথেষ্ট পরিচিত মুখ আকাশ আম্বানি। ২০২২ সালে বিশ্ব মঞ্চে স্বীকৃতি পেল তাঁর কাজ। জুন মাসে জিওর চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন তিনি। তারপর থেকেই গুগল ও ফেসবুকের প্রচুর বিনিয়োগ টেনে এনেছেন তিনি। প্রতি বছর বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করে টাইমস। সেই মতোই উদীয়মান তারকাদেরও একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিশ্বের উদীয়মান তারকাদের তালিকায় একমাত্র ভারতীয় হিসাবে জায়গা করে নিয়েছেন মুকেশ-পুত্র।
নাবিলা সইদ: (Nabeela Saeed) বয়স মাত্র ২৩ বছর। অল্প বয়সেই মার্কিন মুলুকে নজির গড়লেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই তরুণী। আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে। তার মধ্যেই ইলিনইস প্রদেশে বাজিমাত করলেন হিজাব পরিহিতা সদা হাস্যময়ী নাবিলা। দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকানদের দখলে থাকা আসন ছিনিয়ে নিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। আমেরিকার ইতিহাসে কনিষ্ঠতম জনপ্রতিনিধি হিসাবে নজির গড়লেন তিনি। মুসলিম মেয়েরা সমাজে নেতৃত্ব দিতে আসবেন, এটাই তাঁর স্বপ্ন। এই লক্ষ্যে পৌঁছতেই সারাজীবন কাজ করতে চান তিনি
রাধা আয়েঙ্গার: (Radha Ayengar) মার্কিন প্রশাসনে ভারতীয়দের আধিপত্য ক্রমেই বাড়ছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের উপরেই ভরসা রেখেছেন জো বাইডেন। সেই তালিকায় উল্লেখযোগ্য নাম রাধা আয়েঙ্গার প্লাম্ব। আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (USA Defense) ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত হয়েছেন তিনি। নিরাপত্তা বিশারদ হিসাবে বহুদিন ধরেই কাজ করছেন রাধা। ফেসবুকের গ্লোবাল হেড হিসাবে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা নীতি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন তিনি। আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগে পরামর্শদাতা হিসাবেও কাজ করেছেন রাধা।
গীতাঞ্জলি শ্রী: (Gitanjali Shree) সাহিত্যে ভারতকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার এনে দিলেন দিল্লির এই সাহিত্যিক। গীতাঞ্জলি শ্রীর ‘রেত সমাধি’ বা ‘টম্ব অফ স্যান্ড’ উপন্যাসটি ২০২২ সালে বুকার পুরস্কার পেয়েছে। ‘টম্ব অফ স্যান্ড’ বা ‘রেত সমাধি’র মূল উপজীব্য বিষয় দেশভাগ ও এক বৃদ্ধার আত্মঅন্বেষণ। ৮০ বছর বয়সি এক মহিলা তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। কিছুতেই জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পাচ্ছিলেন না। এই অবস্থায় তিনি পাকিস্তানে পাড়ি দেন নিজের শিকড় খুঁজতে। দেশভাগের সময় যে মাটি ছেড়ে তাঁকে চলে আসতে হয়েছিল অন্য এক দেশে। এবার নিজের ঘরে ফিরে নিজের অতীতের মুখোমুখি হওয়ার কাহিনির বুনন ‘রেত সমাধি’। এই উপন্যাস ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছেন আমেরিকার অনুবাদক ডেইজি রকওয়েল। এছাড়াও এই উপন্যাস অনুবাদ করা হয়েছে ফরাসি, জার্মানি, সার্বিয়ান, কোরিয়ান ভাষায়। বলা হচ্ছে, বুকার প্রাইজের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও হিন্দি উপন্যাস, যা স্বীকৃতি পেল।
দলীপ সিং: (Duleep Singh) আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বিশাল ধাক্কা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এহেন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে হামলাকারী রাশিয়ার উপর। নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিষয়ে একেবারে প্রথমে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কোন পথে রাশিয়াকে আটকানো যাবে, সেই নীতি নির্ধারণের নেপথ্য নায়ক ছিলেন দলীপ সিং। রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাইডেনের মন্ত্রিসভাকে পরামর্শ দিয়েছেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আমেরিকার অর্থ বিষয়ক সহকারি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে রয়েছেন দলীপ। তাঁর জন্ম আমেরিকার মেরিল্যান্ডের ওলনিতে। বারাক ওবামার মন্ত্রণালয়েও দলীপ কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক কোষাগারের ডেপুটি সহকারী সচিব এবং কোষাগারের সহকারী সচিব হিসেবে।
সরগম কৌশল: (Sargam Kaushal) ঘরকন্না সামলে বিশ্ব সুন্দরীর খেতাব জয়! আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন এ দেশেরই নারী,সরগম কৌশল। ২০২২ সালের ‘মিসেস ওয়ার্ল্ড’ হলেন সরগম। আর তাঁর হাত ধরে ২১ বছর পর ফের এই শিরোপা এল ভারতে। জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা সরগম কৌশলের বয়স ৩২ বছর। মুম্বইয়ে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। নৌবাহিনী আধিকারিকের সঙ্গে বিয়ের পরেও নিজের স্বপ্নের মডেলিং ছেড়ে দেননি সরগম। স্বামীর উৎসাহেই কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। একের পর এক ধাপ পেরিয়ে বিশ্বসুন্দরীর শিরোপা জিতে নেন ভারতের সরগম কৌশল। বিয়ে মানেই শুধু দায়িত্ব নয়, বরং নতুন মানুষের হাত ধরে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়া।বিশ্ব মঞ্চে এই কথাই বলেছেন ভারতীয় সুন্দরী।
গৌতম আদানি: (Goutam Adani) চলতি বছরেই পৃথিবীর ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিলেন গৌতম আদানি। ফোর্বসের তালিকায় ভারতীয় ধনকুবেরদের মধ্যে শীর্ষস্থানেও রয়েছেন তিনি। ২০২২ সালের প্রথমেও পিছিয়েই ছিলেন আদানি। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই লাগাতার বেড়েছে আদানির সম্পত্তির পরিমাণ। ফেব্রুয়ারি মাসেই মুকেশ আম্বানিকে টপকে ভারতের ধনীতম ব্যক্তি হয়ে ওঠেন গৌতম আদানি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বেও দাপট দেখান ভারতীয় ধনকুবের। ব্লুমবার্গের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন তিনি। বছরের শেষে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন আদানি। ব্যবসার পাশাপাশি সমাজকল্যাণ মূলক কাজের জন্যও স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.