Advertisement
Advertisement

Breaking News

Adolf Hitler

বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই সস্ত্রীক আত্মহত্যা! কেমন ছিল হিটলারের শেষ ২৪ ঘণ্টা?

কেন আত্মহত্যা করতে হল নির্মম একনায়ককে?

Last 24 hours of Adolf Hitler's life। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:September 8, 2022 7:05 pm
  • Updated:September 8, 2022 10:28 pm  

বিশ্বদীপ দে: ৩০ এপ্রিল, ১৯৪৫। দুপুর সাড়ে তিনটে। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে অপেক্ষা করছিলেন অ্যাডলফ হিটলার (Adolf Hitler)। ৬০ লক্ষ নিরীহ ইহুদির রক্তে রাঙা নাৎসি বাহিনীর সর্বাধিনায়কের আঙুলে ধরা রয়েছে ট্রিগার। এরপরই ট্রিগার টেপার শব্দ হবে আর মাটিতে লুটিয়ে পড়বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) প্রধানতম খলনায়কের লাশ। পাশেই লুটিয়ে রয়েছেন ইভা ব্রাউন। হিটলারের দীর্ঘদিনের প্রণয়িনী। বন্দুক নয়, তিনি বেছে নিয়েছেন পটাশিয়াম সায়ানাইড। কেননা রক্তমাখা মৃতদেহ না হয়ে, ‘সুন্দর’ এক লাশ হওয়াই তাঁর লক্ষ্য ছিল! মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে যাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হিটলারের। কিন্তু কেন এভাবে নিজেকে শেষ করে দিতে হয়েছিল এক নবদম্পতিকে? কেমন ছিল জার্মান একনায়কের জীবনের অন্তিম কয়েক ঘণ্টা?

সেকথায় যাওয়ার আগে আরেকটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। একবার দেখে নেওয়া প্রয়োজন অ্যাডলফ হিটলারের উত্থান ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাঁর প্রভাবের দিকটা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পর্যুদস্ত হয়েছিল। রীতিমতো বাধ্যত ভার্সাই চুক্তিতে সই করতে হয়েছিল তাদের। অপমানজনক সেই চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীর তকমা দেওয়া হয় জার্মানিকে। যুদ্ধে জখম হয়েছিলেন করপোরাল পদে থাকা হিটলার। যুদ্ধশেষে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টিতে। এরপরই চমকপ্রদ উত্থান হিটলারের। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছন তিনি। মূলত তেজিয়ান বক্তৃতা দিয়েই তিনি জনসম্মোহন করা শুরু করেন। জার্মানির অধঃপতনের জন্য দায়ী করতে থাকেন ইহুদি ও বলসেভিকদের। বলতে থাকেন নর্ডিক জার্মানরাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি। অচিরেই গোটা বিশ্ব তাদের হাতের তালুতে বন্দি হবে। তাঁর কথা যতই অযৌক্তিক হোক না কেন, বলার ভঙ্গিতেই বাজিমাত হয়ে যেত। লোক পাগল হয়ে যেত তাঁর কথা শুনে। ক্রমে তিনিই হয়ে উঠলেন জার্মানির মুখ। যেভাবে ইটালিকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন আরেক একনায়ক মুসোলিনি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘অনুব্রত নেই বলে…’, গরম চায়ের কাপ হাতে বোলপুরে বসে কেষ্ট-স্মরণ দিলীপের]

Hitler
আত্মহত্যার আগে নিজের টেবিলে বসে স্প্যাগেটি ও স্যালাড খেয়েছিলেন হিটলার

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই হিটলারের সাফল্যে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যায় ইউরোপ। তবে এই মহাযুদ্ধের সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ছিল রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে হওয়া অনাক্রমণ চুক্তি। এক ফ্যাসিস্ট শক্তির সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের এহেন সমঝোতায় যেন সিঁদুরে মেঘ দেখেছিল পশ্চিমি শক্তি। একে একে পোল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক সব দখল করে নিল নাৎসিরা। হল্যান্ড, বেলজিয়াম কিংবা ফ্রান্সও টিকতে পারল না তাদের সামনে। তাদের সঙ্গে দুরন্ত লড়াই হল ব্রিটেনের। কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে হিটলারের মুখোশ খসে পড়ল। সটান ‘বন্ধু’ রাশিয়ার দিকেই ঘুরে গেল জার্মান কামানের মুখ! স্তম্ভিত হয়ে গেলেন স্তালিন। এভাবে যে হিটলার বিশ্বাসঘাতকতা করবেন কে ভেবেছিল?

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত কাল হয় হিটলারের। শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার বিখ্যাত (নাকি কুখ্যাত) শীত ও উলটো পালটা রণনীতিতে জার্মানির সেনাবাহিনী মুখ থুবড়ে পড়তে লাগল। আমেরিকা ও ব্রিটেনের জোট অর্থাৎ মিত্রশক্তি যে শেষ হাসি হাসবে তা ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে উঠল। ক্রমেই কোণঠাসা হতে শুরু করল জার্মানি। ফলে যতই সময় এগোচ্ছিল, ততই ঘনিয়ে আসছিল হিটলারের শেষ দিন। যে দিনটার কথা আমরা শুরুতেই বলেছি। জোনাথন মায়ো ও এমা ক্রেইগির লেখা ‘মিনিট বাই মিনিট’ বইয়ে রয়েছে সেই দিনটার খুঁটিনাটি। বার্লিনের বাঙ্কারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে কী করেছিলেন গোটা দুনিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা ‘ভিলেন’?

[আরও পড়ুন: প্রেমিকার উপর অভিমান, ইউটিউব লাইভে দুঃখপ্রকাশ করে ‘আত্মঘাতী’ ছাত্র]

Hitler
পোষ্যদের সঙ্গে ইভা-হিটলার

মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে, ২৯ এপ্রিল দুপুর তিনটে নাগাদ নিজের পরম আদরের পোষ্য জার্মান শেফার্ড ব্লন্ডিকে পটাশিয়াম সায়ানাইড খাইয়ে হত্যা করেন হিটলার। বলতে গেলে, নিজের মৃত্যুর প্রস্তুতিতে এটাই তাঁর প্রথম পদক্ষেপ। আসলে হিটলার চাননি, ব্লন্ডিকে প্রভুর মৃত্যুশোক দিতে। আর তাঁকে না পেয়ে তাঁর কুকুরটির উপরে অত্যাচার চালাক লালফৌজ। কেবল ব্লন্ডিই নয়, মেরে ফেলা হয় আরও পাঁচটি পোষ্য কুকুরকে। সকলের মৃতদেহ পুঁতে দেওয়া হয় চ্যান্সেলারির বাগানে। এই বাগানেই এতদিন ওই কুকুরদের সঙ্গে খেলা করতেন হিটলার। শোনা যায়, যখন প্রিয় পোষ্যদের কবর দেওয়া হচ্ছে, সেই সময় ভেজা চোখে সেদিকে নিষ্পলকে তাকিয়ে ছিলেন তিনি। দেখে কে বলবে, এই লোকটাই জার্মানির দোর্দণ্ডপ্রতাপ নিষ্ঠুর একনায়ক!

২৯ এপ্রিল রাতেই হিটলার তাঁর উইল তৈরি করেন। সেখানেই তিনি এই ইচ্ছা জানিয়ে যান, যেন মৃত্যুর পরে তাঁকে ও ইভাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যখন হিটলার তাঁর চেম্বারে বসে এই ইচ্ছাপত্র তৈরি করছেন, ইভা নিজের ঘরে ব্যস্ত ছিলেন বিয়ের পোশাক বাছতে। যদিও ততক্ষণে তিনি জেনে গিয়েছিলেন এই বিয়ের পরিণতি হবে কয়েক ঘণ্টা! শোনা যায়, ২৯ তারিখ দুপুরের খাওয়ার সময়ই হিটলার তাঁর পরিকল্পনার কথা খুলে বলেছিলেন বান্ধবীকে। জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বন্দুকের সাহায্যেই আত্মহননের পথ বেছে নেবেন। আর সেই সময়ই ইভা বলেন তাঁর অভিপ্সার কথা। জানিয়ে দেন, জীবননাট্যের শেষ দৃশ্যে কোনও রক্তারক্তি চান না তিনি। তাই পটাশিয়াম সায়ানাইডের স্পর্শেই মৃত্যুর নীল রংকে প্রত্যক্ষ করবেন। শুরুতেই বলা হয়েছে, রক্তমাখা মৃতদেহ নয়, ‘সুন্দর’ এক লাশ হয়ে ওঠাই ছিল তাঁর লক্ষ্য!

Hitler

অবশেষে ৩০ এপ্রিল রাত একটা নাগাদ হিটলার বিয়ে করলেন ইভাকে। তারপর আড়াইটে নাগাদ, রাত যখন গভীর, শুরু হল এক পার্টি। যেখানে নবদম্পতির সঙ্গে ছিলেন হিটলারের দুই সেক্রেটারি ও ডাক্তার-নার্সরা। শোনা যায়, মদ্যপ অবস্থায় হিটলার জানিয়ে দেন, ইভার সঙ্গে একই সঙ্গে মৃত্যুবরণ করবেন তিনি।

এরপর সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একটি ঘরে ঢুকে যান তাঁরা। কিন্তু হিটলারের সেই ফুলশয্যা খুব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ভোর ছ’টায় খবর আসে লালফৌজের দখলে চলে গিয়েছে রিখস্ট্যাগ। তারও কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর এল এবার বার্লিনে দুদ্দাড়িয়ে ঢুকে পড়তে চলেছে রুশ সেনা। হিটলার বুঝে গেলেন শেষ আশাও অন্তর্হিত। এবার প্রস্তুতি শুরু হল আত্মহত্যার। বেলা পৌনে একটা নাগাদ নিজের সেনানায়কদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

দুপুর গড়ায়। নিজের টেবিলে বসে স্প্যাগেটি ও স্যালাড খেলেন হিটলার। একাই। ইভা কিন্তু নিজের ঘরেই বন্দি ছিলেন। দুপুর যত এগোচ্ছিল, ততই শেষ মুহূর্তের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন তিনি। হিটলার যখন ভাবলেশশূন্য মুখে শেষ খাওয়া সারছেন, ইভা তখন নিজেকে সাজাচ্ছেন প্রেমিকের প্রিয় সাদা গোলাপ বসানো কালো পোশাকে।

Hitler-death

এই লেখার শুরুর দৃশ্যে ফেরা যাক। হিটলার ও ইভার ঘর থেকে ভেসে এল গুলির শব্দ। কিছুক্ষণ পরে গোয়েবলস ও অন্যরা ঘরে ঢুকে দেখতে পেলেন দুই নিস্পন্দ মৃতদেহকে। বাইরে তখন গোলাবর্ষণের কর্কশ শব্দ। এর মধ্যেই দ্রুত দু’টি শবকে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হল। আর তারপর সেই ছাই ছড়িয়ে দেওয়া হল চ্যান্সেলারির বাগানে। যে বাগানে নিজের পোষ্যদের দেহ আগের দিন পুঁতে দিয়েছিলেন হিটলার। গোটা পৃথিবীর মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠা ভয়ংকর এক নেতার কী করুণ পরিণতি! তবে মুসোলিনির মতো ধরা পড়ে চরম লাঞ্ছনার মুখে পড়তে হয়নি, শেষবার ট্রিগার টেপার সময় এইটুকুই হয়তো ছিল হিটলারের সান্ত্বনা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement