সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লাহোর হাই কোর্ট ফেরাল পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের আবেদন। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে মুশারফকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল বিশেষ আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে শুক্রবার লাহোর হাই কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন আইনজীবী আজহার সিদ্দিকি। ১৭ ডিসেম্বর মুশারফকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়। এর বিরুদ্ধে আবেদন জানিয়ে আজহার সিদ্দিকি ৮৬ পাতার আবেদন জানিয়েছেন। ওই আবেদনে তিনি বলেছেন, তাঁর মক্কেল মুশারফ পুরোপুরি নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসির সাজা শুনিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ের বিরুদ্ধে শুনানির জন্য এখনই একটা সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করা হোক।
জবাবে লাহোর হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘এখন শীতের ছুটি চলছে। আদালত আংশিক বন্ধ। ফলে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির জন্য পুরো বেঞ্চ গঠন করা যাবে না। কারণ সব বিচারপতি এখন আদালতেই নেই। ছুটি শেষ হলে আপনারা আবেদন জানাতে পারেন।’ এই ঘটনায় হতাশ হন মুশারফের আইনজীবী।
পরে অবশ্য লাহোর হাই কোর্ট জানিয়েছে, মুশারফের মামলাটির শুনানি হবে ৯ জানুয়ারি। তবে কোনও সাংবিধানিক বেঞ্চে নয়। তিন সদস্যের সাধারণ বেঞ্চেই হবে শুনানি। সেখানে ফাঁসির সাজা দেওয়া বিচারপতিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ বা নালিশ করতে পারবেন না মুশারফের আইনজীবী। এজন্য জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই মুশারফের আইনজীবীকে আলাদাভাবে আবেদন জানাতে হবে। তবেই হবে শুনানি। স্পষ্টতই হাই কোর্টের সিদ্ধান্তে বেশ অস্বস্তিতে মুশারফ ও তাঁর আইনজীবী।
বর্তমানে চিকিৎসার জন্য দুবাইয়ে রয়েছেন এককালের দাপুটে পাক সেনাপ্রধান ও কারগিল যুদ্ধের অন্যতম চক্রী মুশারফ। এক ভিডিও বার্তায় মুশারফ দাবি করেছেন,
ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তাঁকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রায়ের লিখিত নির্দেশের ৬৬ নম্বর পরিচ্ছদ নিয়ে আপত্তি করেছেন তিনি। রায়ের ওই কপিটি লিখেছেন পেশোয়ার হাই কোর্টের বিচারপতি ওয়াকার আহমেদ শেঠ। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, মুশারফকে ফাঁসি দিয়ে দেহ সাত ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ফাঁসির আগে মুশারফ যদি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান তাহলে তাঁর দেহ ইসলামাবাদের চৌরাস্তায় ক্রেনে করে ঝুলিয়ে রাখতে হবে তিন দিন। এই শাস্তিই মুশারফের প্রাপ্য। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের মসনদে ছিলেন মুশারফ। কারগিল যুদ্ধে হারের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের উপর হারের দায় চাপিয়ে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন তিনি। তাঁর আমলেই পাক-অধিকৃত কাশ্মীর সহ গোটা উপমহাদেশে ভারত বিরোধী নাশকতা তুঙ্গে পৌঁছয়। ২০০১ সালে ৯/১১ হামলার পর মুশারফের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে মার্কিন লড়াইয়ে যোগ দেয় পাকিস্তান। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, তাঁর আমলে বেশ মজবুত হয় পাক অর্থনীতি ও সামরিকবাহিনী। ২০০২ সালে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলেও প্রতিশ্রুতিমতো সেনাপ্রধানের পদ ছাড়তে অস্বীকার করেন মুশারফ।
২০০৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বরখাস্ত করেন তিনি। তারপর থেকেই মুশারফের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভের হাওয়া বইতে শুরু করে। ঘরোয়া রাজনীতির চাপে বাধ্য হয়ে ইস্তফা
দিতে হয় তাঁকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.