ফাইল ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অব কি বার, চারশো পার। গত মার্চ মাস থেকে এই স্লোগান যেন পৌঁছে গিয়েছিল ভারতবাসীর ঘরে ঘরে। সেই একই স্লোগান কি ভোটারদের কানে পৌঁছে দিয়েছিলেন কিয়ের স্টার্মারও? জানা নেই। তবে প্রকাশ্যে চারশো পারের ডাক না দিলেও আদতে জিতে নিলেন ৪১১টি আসন। অন্যদিকে, চারশো পারের ডাক দেওয়া নরেন্দ্র মোদির ‘বন্ধু’ ঋষি সুনাক ধরাশায়ী হলেন। বিষণ্ণ মুখে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটকে বিদায় জানালেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী।
বিজেপি কি চারশো আসন পেয়ে টানা তৃতীয়বার কেন্দ্রে সরকার গড়বে? লোকসভা নির্বাচনের আবহে এই চর্চায় মেতে উঠেছিল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। একাধিক নির্বাচনী সভা থেকে বিজেপি নেতাদের হুঙ্কার, চারশো আসন নিয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে কেন্দ্রে ফিরবে মোদি সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত চারশো পার ‘অধরা মাধুরী’ হয়ে রইল বিজেপির কাছে। ৪০০ আসন জেতা তো দূর, তিনশোরও কমে আটকে গিয়েছিল পদ্মশিবির।
তবে কিয়ের স্টার্মার নির্বাচনী (UK Election)) প্রচারে গিয়ে এমন স্লোগান দেননি বলেই জানা গিয়েছে। কিন্তু ৪০০র বেশি আসন জিততে কিন্তু মরিয়া ছিলেন বামঘেঁষা মধ্যপন্থী নেতা। ২০২০ সালে লেবার পার্টির প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তো তাঁর একটাই লক্ষ্য ছিল- কনজারভেটিভ সরকার হঠিয়ে মানুষের জন্য় সরকার গড়তে হবে। সেজন্য ৩২৬টি আসনই যথেষ্ট। কিন্তু স্টার্মারের লক্ষ্য ছিল তারও উঁচুতে। ৪০০র বেশি আসন জেতাই নয়, ব্রিটেনের নির্বাচনী ইতিহাসে টোরিদের নিকৃষ্টতম ফলাফল যেন হয়; সেদিকেও যত্ন নিয়েছেন লেবার (Labour Party) নেতা।
জনতার মন জিততে আর পাঁচজন রাজনীতিবিদের মতো হাতিয়ার করেছেন সরকারের ব্যর্থতাকে। সুনাক শাসনে দেশবাসীর দুরাবস্থা দূর করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভোটারদের। কিন্তু চারশো পার করতে এইটুকু যথেষ্ট ছিল না। তাই লক্ষ্যপূরণ করতে ভোটারদের দাবির কাছেও নত হয়েছেন দুঁদে আইনজীবী স্টার্মার। ১০ লক্ষ হিন্দু ভোটারের মন জিততে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার অ্যাজেন্ডা নিয়েছেন। ব্রিটেন থেকে হিন্দুফোবিয়া দূর করতে কড়া বার্তাও দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দলের যেসমস্ত নেতা হিন্দু বা ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন, তাঁদের কথায়-কাজে রাশ লাগাম পরাতে দ্বিধা করেননি। অব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ভোটারদের মনে জয়ে নরম অভিবাসী নীতি নিয়েছেন। এমন হাজারো নীতির ভিতেই গড়ে তুলেছেন ৪০০ পারের ইমারত।
অন্যদিকে, নির্বাচনে জিততে সুনাকের (Rishi Sunak) ভরসা ছিল ফাটকা। দলের আপত্তি উড়িয়ে সময়ের আগে নির্বাচন ঘোষণা করে জিততে চেয়েছিলেন। মোদি ঘনিষ্ঠ নেতা হিসাবে বিশ্ব রাজনীতিতে পরিচিত সুনাকের আত্মবিশ্বাসী ভাষণ, “প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যা কাজ করেছি ব্রিটেনের মানুষ সেই দেখেই ভোট দেবেন।” একের পর এক নির্বাচনী সমীক্ষায় ফুটে উঠেছে লেবারদের প্রত্যাবর্তন, তবুও এতটুকু চিড় খায়নি সুনাকের ‘দম্ভ’। স্যুট-বুটে সেজে তিনি তোপ দেগেছেন, ভোটের আগেই জিতে যাওয়ার অন্তঃসারশূন্য জিগির তুলছে বিরোধীরা। হিন্দু ভোট টানতে নিজেকে বারবার গর্বিত হিন্দু বলেও তুলে ধরেছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না, গদি ছাড়তেই হল সুনাককে। বিপর্যয়ের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে মাথা নিচু করে বিদায় জানালেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটকে। দক্ষিণপন্থীর পরাজয়ে কি রুপোলি রেখার সন্ধান পেল বিশ্বের নানা প্রান্তে লড়তে থাকা বামপন্থী-সমাজপন্থীরা?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.