সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছোটপর্দা হোক বা বড়পর্দা, চিত্রনাট্যের নাম করে পরিচালকরা কিছু সুবিধা নিয়েই থাকেন। প্রয়োজনমতো রদবদল করেন বিখ্যাত সাহিত্য বা ঐতিহাসিক ঘটনা। এই নিয়ে নানা সময়ে নানা প্রতিবাদ উঠেছে। বলা হয়েছে, এতে শেষ পর্যন্ত যতটা না তথ্যবিকৃতি ঘটছে, তার থেকেও বেশি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা আসলটা জানছেন না, বরং বিভ্রান্ত হচ্ছেন বাড়তি ঘটনার ঘনঘটায়। তারই ভয়াবহ রূপ ফের দেখা গেল বাংলাদেশে। ভারতীয় এক ধারাবাহিকের জেরে যেখানে রীতিমতো দাঙ্গার সম্মুখীন হলেন স্থানীয় মানুষ।
ধারাবাহিকের নাম ‘কিরণমালা’। ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে যে লোককথার গল্প উঠে এসেছিল দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের লেখনীতে। ‘ঠাকুরমার ঝুলি’-র অন্যতম সম্পদ হয়ে ছিল তাঁর লেখা গল্প ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’। যে গল্পে কিরণমালাকে দেখা গিয়েছিল ভাইদের উদ্ধারকর্তী হিসেবে। কিরণমালার সেই অভিযান, সাহসিকতা, সততা আর নির্ভীকতার গল্প আজও বাঙালির সম্পদ। যা পরে আশ্রয় হল ‘স্টার জলসা’র ধারাবাহিকেরও!
আর, সেই জায়গা থেকে ফের উঠে এল প্রশ্ন- চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে একটা কাহিনিকে কতটা বদলে ফেলা যুক্তিসঙ্গত? ছোটপর্দায় যখন শুরু হয়েছিল ‘কিরণমালা’, তখন অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন। যে কিরণমালাকে দেখাচ্ছে, যার গল্প বলছে ধারাবাহিক, তা তো বাংলার লোককথা-আশ্রয়ী নয়! ঠিক এই ব্যাপারটাই বাংলাদেশের হাবিবগঞ্জের ঢোলগ্রামে তোলপাড় ফেলল!
সূত্রের খবর, ঢাকা থেকে কিছু দূরের ঢোলগ্রামে একটি কাফেতে সে দিন জমায়েত হয়েছিলেন বেশ কিছু গ্রামবাসী। টিভি-তে চলছিল ‘কিরণমালা’। দেখতে দেখতে তা নিয়ে রীতিমতো ঝগড়া শুরু হয় দুই ব্যক্তির। একজনের বক্তব্য ছিল, যা দেখানো হচ্ছে, তা পুরোটাই ভুয়া! অন্য পক্ষ তা মেনে নিতে নারাজ!
এর পর জল গড়িয়ে যায় অনেক দূর! কিছুক্ষণের মধ্যেই কাফেতে শুরু হয় হাতাহাতি। দর্শকরা ভাগ হয়ে যান দুই দলে। তার পর এই হাতাহাতি চেহারা নেয় দাঙ্গার! লাঠি, ছুরি নিয়ে শুরু হয় মারামারি! যা থামাতে বেশ বেগ পেতে হয় প্রশাসনকেও। পুলিশ রবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস প্রয়োগ করেও উত্তেজনা প্রশমিত করতে পারছিল না।
সত্যি বলতে কী, ‘স্টার জলসা’র ধারাবাহিক বহু দিন ধরেই নানা দুঃখজনক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে বাংলাদেশে। এর আগেও ধারাবাহিকের গল্পের জন্য দুই পক্ষে ঝগড়া বেধেছে। ঈদে কিরণমালার মতো পোশাক না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে দুই বোন- বাংলাদেশ এমন ঘটনারও সাক্ষী থাকতে বাধ্য হয়েছে। তবে, এমন জনবিক্ষোভের রেশ দেখা গেল এই প্রথম!
এর পরেও কি সতর্ক হবেন না ধারাবাহিক নির্মাতারা?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.