সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে আবেগে ভাসলেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। প্রয়াত রানি তথা মা এলিজাবেথ দ্বিতীয়কে স্মরণ করে দেশবাসীর সেবায় সমস্ত জীবন উৎসর্গ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। শুধু সম্রাজ্ঞী নয়, মা হিসেবে পরিবারের প্রতি এলিজাবেথের দায়িত্ব তথা ভালবাসার কথা স্মরণ করে আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ধন্যবাদ মা’।
বৃহস্পতিবার বাকিংহাম প্যালেসের পক্ষ থেকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই রাজপাট চলে আসে চার্লসের হাতে। কারণ শূন্য থাকে না সিংহাসন। ফলে ৭৩ বছর বয়সে এসে রাজা হলেন চার্লস– কিং চার্লস থার্ড। তারপরের দিনই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। এদিন রাজা চার্লস বলেন, “আমার প্রিয় মা, আমি জানি এই অন্তিম যাত্রা শেষে বাবার সঙ্গে দেখা হবে তোমার। আমি শুধু এটাই বলতে চাই–এত বছর ধরে পরিবার ও দেশের জনতার প্রতি তোমার ভালবাসা ও নিষ্ঠার জন্য ধন্যবাদ। আমি আশা করি দেবদূতরা সুমধুর সংগীতে তোমাকে স্বাগত জানাবে। আজ মনে গভীর শোক নিয়ে আমি এই কথাগুলি বলছি। আমার মা আমাদের সবার কাছে উদাহরণ ছিলেন। তিনি জনতার সেবার জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। আজ একই পথে হাঁটার প্রতিশ্রুতি দিলাম আমি।”
উল্লেখ্য, এদিন রাজা চার্লস (King Charles III) বুঝিয়ে দেন যে মায়ের মৃত্যুতে শোক পেলেও কর্তব্যে অবিচল থাকবেন তিনি। মৃত্যু থেকে পরবর্তী দশ দিনের নির্ঘণ্ট স্থির, আবার পাশাপাশি নতুন দায়িত্ব সামলানোর প্রক্রিয়ায় তিনি এখন ব্যস্ত। বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে আসা রাষ্ট্রপ্রধানদের বার্তার জবাব দেওয়া থেকে দেশের মানুষের উদ্দেশে বার্তা সবই সামলাতে হচ্ছে তাঁকে।
এদিকে, আগামী মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্যালেস থেকে রয়্যাল ট্রেনে রানির দেহ এসে পৌঁছবে লন্ডনে। বালমোরাল থেকে ওয়েস্টমিনস্টার হলে পৌঁছে সেখানেই শেষ কয়েকটি দিন কাটাবেন এলিজাবেথ। মৃত্যুর দশদিন পরে অন্তে্যষ্টি। তৃতীয় দিন থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত ওয়েস্টমিনস্টার হলে ‘মোশন অফ কনডোলেন্স’ গ্রহণ করবেন নতুন রাজা এবং রাজপরিবার। এরপর নতুন রাজা করবেন ব্রিটেন সফর। মৃত্যুর ষষ্ঠ থেকে নবম দিন রানির দেহ ওয়েস্টমিনস্টার হলে শায়িত থাকবে। এই তিনদিনে রানিকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রতিদিন ২৩ ঘণ্টা খোলা থাকবে হলের দ্বার। ১৯ সেপ্টেম্বর ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে শায়িত হবে রানির কফিন। একটি যুগে দাঁড়ি টেনে স্বামী ফিলিপের পাশেই সমাধিস্থ হবেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
একদিকে যখন রানির শেষকৃত্যের প্রস্তুতি চলবে অন্যদিকে তখন পাশাপাশি চলবে নতুন রাজার অভিষেকের প্রস্তুতিও। উত্তরাধিকারী হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার সাত দশক পর যিনি আসীন হচ্ছেন রাজ সিংহাসনে। ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর চার্লস যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তাঁর মা এলিজাবেথ রানি হননি, ছিলেন প্রিন্সেস। প্রিন্স ফিলিপ এবং প্রিন্সেস এলিজাবেথের প্রথম সন্তান চার্লসের জন্মের সময়ই নির্ধারিত হয়ে যায় মায়ের পর সিংহাসনের দাবিদার তিনিই। ১৯৫২ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর এলিজাবেথ হন সিংহাসনের অধিকারী। আর ২১ বছর বয়সে ১৯৬৯ সালের ১ জুলাই প্রিন্স অফ ওয়েলস হিসাবে চার্লসকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি যুবরাজ হিসাবেও তাঁকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে যায়। যদিও রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর সময় মাত্র তিন বছর বয়সেই সিংহাসনের উত্তরাধিকার চার্লসের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় কিন্তু প্রকৃত উত্তরাধিকার পেতে তাঁকেই অপেক্ষা করতে হল আরও সাতটি দশক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.