সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (America) ৪৬তম প্রেসিডেন্ট (US president) হিসাবে শপথ নেওয়ার পরই পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছেন জো বিডেন (Joe Biden)। প্রথম দিনে ১৫টা কার্যনির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি। ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে বুধবার ভারতীয় সময় রাত দশটা নাগাদ শপথ নেওয়ার পর বিডেন বলেন, ‘‘আমরা আমেরিকার নতুন ইতিহাস রচনা করব। আমাদের অনেক ক্ষত মেরামত করার প্রয়োজন আছে। অনেক কিছু গড়ার আছে।’’ ট্রাম্প জমানার যে আমূল পরিবর্তন ঘটতে চলেছে তার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এটা গণতন্ত্রের দিন। গণতন্ত্রেরই জয় হয়েছে।’’
৭৮ বছর বয়সি নয়া প্রেসিডেন্ট বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ফের অতীতের জায়গায় নিয়ে যাওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরে আমেরিকা তার অতীতের বহু মিত্রকে হারিয়েছে। বিশ্বের অসংখ্য দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। এমনকী, ন্যাটো জোটকেও বরবাদ করেছিলেন ট্রাম্প। সেইদিকে ইঙ্গিত করে বিডেন বলেন, ‘‘আমরা আমাদের পুরনো বন্ধু ও জোটগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ফের উন্নতি ঘটাব এবং আমেরিকাকে গোটা বিশ্বের ভালর জন্য নেতৃত্বের জায়গায় ফের প্রতিষ্ঠিত করব।’’ শপথের পর বিডেনের এই ২১ মিনিটের ভাষণ আশা জাগিয়েছে গোটা বিশ্বে। তাঁর শপথের পরই তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। তিনি পরস্পরের হাতমিলিয়ে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরও উন্নত করার ডাক দিয়েছেন। বিডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও।
বিডেন শপথ নেওয়ার পর প্রথম যে যে বিষয়গুলি নিয়ে নির্দেশ জারি করেছেন সেগুলি হল– কোভিড মোকাবিলা, প্যারিস পরিবেশ চুক্তিতে পুনঃপ্রবেশ, একশো দিন মাস্ক পরার নির্দেশ, মুসলমানদের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইত্যাদি। অর্থাৎ, প্রথম দিনই পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান নীতিগুলি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেন বিডেন। বুধবার অভূতপূর্ব নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে শপথ নেন বাইডেন। আফগানিস্তান এবং ইরাকে মিলিতভাবে যত সংখ্যক মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে, তার পাঁচগুণ বেশি নিরাপত্তারক্ষী হাজির ছিল বিডেনের শপথগ্রহণে। দু’দেশে ২,৫০০ করে মার্কিন সেনা মোতায়েন হয়। আর ওয়াশিংটনে ছিল ২৫ হাজার সেনা!
নিরাপত্তারক্ষীদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন পপ তারকা জেনিফার লোপেজ। যিনি এ দিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শপথ অনুষ্ঠানে মার্কিন জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন লেডি গাগা। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। তবে তাঁকে শাড়ি পরে আসতে দেখা যায়নি। অনুষ্ঠানের ঘণ্টাখানেক আগে আবার বোমা বিস্ফোরণের আশঙ্কায় মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট খালি করে দেওয়া হয়।
বিডেনের কর্মসূচিতে আপাতত কোভিড মোকাবিলা সবচেয়ে জরুরি। শপথগ্রহণের আগের রাতে ওয়াশিংটন পৌঁছেই তিনি কোভিডে মৃতদের স্মৃতিতে শোকসভায় নেতৃত্ব দেন। সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-মৃত্যুর সংখ্যা চার লক্ষ পেরিয়ে যায়। তাঁদের স্মৃতিতে লিংকন মেমোরিয়ালে চারশো আলো জ্বালানো হয়। প্রথা মেনে বুধবার শপথগ্রহণের আগে ক্যাথিড্রাল অফ সেন্ট ম্যাথিউয়ে প্রার্থনা করেন সস্ত্রীক বিডেন। কমলা হ্যারিস এবং তাঁর স্বামী ডগলাস এমহফও গির্জায় প্রার্থনা করেন। শপথে সস্ত্রীক হাজির ছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ (জুনিয়র), বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা। তবে প্রত্যাশিত ভাবেই অনুপস্থিত ছিলেন সদ্য প্রাক্তন হওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.