সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বালাকোট আজ সংবাদের শিরোনামে। ভারতীয় বায়ুসেনা যে তিনটি জায়গার জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বালাকোট। ইতিহাস বলছে, বালাকোটে জঙ্গিঘাঁটি কিন্তু আজকের নয়। এমনকী ১০-২০ বছর আগে যে এখানে সন্ত্রাসবাদীদের আস্তানা গড়ে উঠেছিল তাও নয়। বালাকোটের জঙ্গি-ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরনো।
এই জঙ্গি-ইতিহাসের বীজ পোঁতা রয়েছে কিন্তু ভারতেই। প্রায় দু’শতক আগের কথা। উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলির এক ব্যক্তি, নাম সৈয়দ আহমেদ বরেলভি বালাকোটে জঙ্গিঘাঁটির পত্তন করে। আধুনিক যুগে এই সৈয়দই শুরু করে জেহাদ। জন্ম থেকেই ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করত সে। ইসলামি শাসন জারি করার পক্ষপাতী ছিল। মারাঠা, শিখ ও জাঠ মোঘলদের থেকে স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় নিরাশ ছিল সে।
রায়বরেলি থেকে উত্তর-পশ্চিমদিকে চলে যায় সৈয়দ। এখন যে জায়গাটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া নামে পরিচিত সেই জায়গায় আস্তানা গড়ে সে। আফগানিস্তান তাকে ‘ইসলামিক রাষ্ট্র’ তৈরির সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। এছাড়া ওই এলাকার মানুষ শিখদের মহারাজ রঞ্জিত সিংয়ের উপর খুব একটা প্রীত ছিল না। ফলে তারাও সৈয়দের সঙ্গে এসে যোগ দেয়। প্রায় ২ হাজার ৫০০ জনের মুজাহিদিনকে নিয়ে সে পেশোয়ারের দিকে রওনা দেয়। পাকিস্তানি লেখক আজিজ আহমেদ জানিয়েছেন, বরেলভি ১৮৩১ সালে বালাকোট পৌঁছয়। তার আগে প্রায় পাঁচ বছর সে একাধিক জায়গায় ঘুরেছে। সেসময় টংকের নবাবকে একটি চিঠিতে সে লেখে, বালাকোট খুব নিরাপদ আশ্রয়। এর একদিক পাহাড় দিয়ে ঘেরা, অন্যদিক নদী দিয়ে। কেউ সহজে এখানে পৌঁছতে পারবে না।
[ পাঁচতারা হোটেলের মতো বিলাসবহুল ছিল বালাকোটের জঙ্গিঘাঁটি ]
কাশ্মীরের শাসক হরি সিং তাঁর সেনাপতি শের সিংকে আদেশ দিয়েছিলেন, অবিলম্বে যেন বরেলভি ও তার মুজাহিদিন দলকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। পাহাড়ের উপর থেকে বরেলভি ও তার দলের উপর নজর রাখতে শুরু করে শের সিং। ১৮৩১ সালের ৬ মে বালাকোটে মুখোমুখি হয় মুজাহিদিন ও শিখ সেনা। যুদ্ধে মারা যায় বরেলভি ও শাহ ইসমাইল (ইসলামিক স্কলার শাহ আবদুল আজিজের ভাইপো)। জঙ্গিগোষ্ঠী মুজাহিদিন তাই আজও সৌয়দ বরেলভিকে শহিদ বলে মনে করে।
নিজেকে ইমাম বা বড় ধর্মীয় নেতা বলে জাহির করত বরেলভি। তাকে ডাকা হত খলিফা বলে। শাহ ইসমাইল ও তার পরিবার এখনও জেহাদিদের স্মৃতিতে একটি স্থান দখল করে রেখেছে। জইশ জঙ্গিগোষ্ঠী থেকেই আসে জেহাদিরা। শাহ ইসমাইলের কাকা শাহ আবদুল আজিজের মতে, ভারত এমন একটি ভূখণ্ড যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা বৈধ। কারণ এটি একসময় মুসলিমদের অধীন ছিল। তাই এর উপর মুসলিমদের অধিকার থাকবে। জেহাদ তাই এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আজ বালাকোট লস্কর প্রধান হাফিজ সইদের মত জঙ্গিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পরিণত হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের হাতে পেতে মরিয়া এরা।
[ চপার দুর্ঘটনায় মৃত্যু নেপালের পর্যটনমন্ত্রীর ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.