সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে আমেরিকার পাশে দাঁড়াবে ব্রিটেন। এমন জল্পনা আন্তর্জাতিক মহলে বরাবরই ছিল। এবার তাতে একপ্রকার সিলমোহর দিলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা জেরেমি হান্ট। ইতিমধ্যেই দলের শীর্ষ পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রীর আসনও ছেড়ে দেবেন তিনি। এদিকে দলীয় নির্বাচনে এগিয়ে হান্ট। ফলে ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর বসার সম্ভাবনা প্রবল।
[আরও পড়ুন: পুনর্নির্বাচনেও হল না শেষরক্ষা, ইস্তানবুল খুইয়ে বিপাকে এরদোগান]
বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতায় আসলে প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের পথেই হাঁটতে পারেন সে দেশের বিদেশ সচিব জেরেমি হান্ট। উল্লেখ্য, একদা সাদ্দাম হুসেনের ইরাকে মার্কিন হামলায় আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ব্লেয়ার। এদিকে যুদ্ধের ইঙ্গিত গিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন হান্ট। ইরাক ও আফগানিস্তানের লড়াই নিয়ে ব্রিটিশ জনতার মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তারই মাঝে ফের ইরানের সঙ্গে মার্কিন লড়াইয়ে জড়িয়ে যাওয়ার পক্ষে মোটেই সে দেবে না সে দেশের জনতা। যদিও এই বিষয়ে জেরেমি হান্ট বলেছেন, “পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তবেই আমেরিকাকে সামরিক সাহায্য দেওয়ার কথা ভাববে ব্রিটেন। দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের সমস্ত চেষ্টা করবে ব্রিটেন। তবে বন্ধু আমেরিকাকে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। ”
এদিকে, ইরানের সঙ্গে সংঘাতের আবহে সোমবার সৌদি আরবের রাজার সঙ্গে দেখা করেন আমেরিকার বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও। পশ্চিম এশিয়ায় জোটসঙ্গীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই তাঁর এই সফর বলে মনে করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্ররোধী ব্যবস্থার উপর সাইবার আক্রমণ নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সোমবার তা অস্বীকার করেছে তেহরান। তাদের দাবি, এই রকম আক্রমণ চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা আদৌ সফল হয়নি। ইরানের সমস্ত ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। শুধু তাই নয়, আমেরিকার সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞাকেও গুরুত্ব দিতে চায়নি ইরান। তাদের মন্তব্য, আর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বাকি আছে? ৪০ বছরে কম ক্ষতি করেছে? নতুন করে কীই বা ক্ষতি করবে ওয়াশিংটন? নয়া নিষেধাজ্ঞার কোনও প্রভাব পড়বে না।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে মার্কিন নজরদারি ড্রোন ধ্বংস হওয়ার জেরে দু’দেশের মধ্যে তিক্ততা চরমে। এই আবহেই সোমবার একদিনের সফরে জেড্ডায় পৌঁছেছেন পম্পেও। সৌদির রাজা সলমনের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তাঁকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে আপ্যায়ণ করেন রাজা সলমনও। পরে আর এক জোটসঙ্গী সংযুক্ত আরব আমিরশাহি উড়ে যাওয়ার আগে বকলমে সৌদির মুখ্য শাসক যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে দেখা করেন পম্পেও। জানা গিয়েছে, পশ্চিম এশিয়ায় চিরশত্রু ইরানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার পক্ষেই সওয়াল করেছেন সৌদি ও আমিরশাহির শাসকরা। ইরানের যুদ্ধে ব্যবহারের আশঙ্কায় পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিকে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মার্কিন কংগ্রেস। কিন্তু নিজের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে ৮১০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির ছাড়পত্র দিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব।
পম্পেও জানান, শুধু উপসাগরীয় এলাকাই নয়, গোটা এশিয়া ও ইউরোপে সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে তাঁরা জোট বাঁধতে আগ্রহী। যাতে বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মদতদাতা ইরানকে একঘরে করা যায়। কিন্তু সেই লক্ষ্যে ইউরোপে খুব একটা সাড়া মিলবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, বারাক ওবামার আমলে ইরানের সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি হয়েছিল আমেরিকার। যার বিনিময়ে ধাপে ধাপে তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার কথা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর আচমকা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসায় ক্ষুব্ধ ইউরোপীয় দেশগুলি। তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করায় তেহরানও কিছুটা মরিয়া হয়ে উঠেছে। একতরফা নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাদের সমস্ত রফতানি বন্ধের মাধ্যমে আমেরিকা আর্থিক যুদ্ধ শুরু করেছে বলেও তেহরানের অভিযোগ।
[আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যে ফের যুদ্ধের মেঘ, ইরানের মিসাইল সিস্টেমে আঘাত হানল আমেরিকা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.