সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করেছে, তাদের পত্রিকার সৌদি সাংবাদিক ও কলামিস্ট জামাল আহমেদ খাশোগ্গির খুনিরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল আমেরিকাতেই। ওয়াশিংটন পোস্ট এর আগেও ধারাবাহিক প্রতিবেদন ছেপে জানিয়েছিল, সৌদি রাজপরিবারের পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি ও কেচ্ছার খবর ধারাবাহিকভাবে ফাঁস করেছিলেন ষাটোর্ধ্ব খাশোগ্গি।
[আরও পড়ুন: শত্রুর রাডার খুঁজতে ‘এমিস্যাট’ উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাল ভারত]
এর ফলে সৌদি রাজপুত্র মহম্মদ বিন সলমনের রোষে পড়েন তিনি। সুযোগ বুঝে ঠান্ডা মাথায় তাঁকে কেটে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে খুন করেছিল সলমনের অনুগত সৌদি আরব সরকারের গুপ্তচরবাহিনীর কিলিং টিম। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় সৌদি দূতাবাসে ডেকে এনে ছক কষেই খাশোগ্গিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর দেহাবশেষ দূতাবাসেই দু’ দিন ধরে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। অর্থাৎ খুনের সব চিহ্নই লোপাট করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ড চলাকালীন সৌদি যুবরাজ সলমনের ফোন কল-সহ একাধিক অডিও টেপ ফাঁস হওয়ায় প্রকাশ্যে চলে আসে, সলমন নিজেই নির্দেশ দিচ্ছেন কীভাবে খুন করতে হবে খাশোগ্গিকে। তুরস্কের গোয়েন্দাবাহিনী এবং মার্কিন গোয়েন্দাদের রিপোর্টেও সরাসরি সলমনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এর জেরে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি হয় সৌদি আরবের। কিন্তু সুকৌশলে সেই সম্পর্ক মেরামত করেন সলমন। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে বিবৃতি দেন, সলমন নির্দোষ। মার্কিন পত্রিকাগুলির মতে, এর ফলে দুনিয়া জুড়ে দ্বিগুণ বেগে সলমন প্রচার করতে শুরু করেন, তাঁর বিরুদ্ধে খাশোগ্গি হত্যার দায় চাপাচ্ছে তুরস্ক ও মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলি।
এই অবস্থায় প্রাক্তন সহকর্মীর হত্যার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যে একাধিক মার্কিন ও সৌদি সূত্রের সাক্ষাৎকার নেন দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ডেভিড ইগনেসিয়াস। সেখান থেকে উঠে আসা তথ্য নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন তিনি। তা থেকে জানা গিয়েছে, গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে সহযোগিতা রয়েছে। তারই সুযোগ নেয় খাসোগির কিলিং টিমের কয়েকজন সদস্য। মার্কিন মুলুকে আরকানসাসের টিয়ার-১ গ্রুপ সংস্থার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেয় তারা।
সৌদি গোয়েন্দা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে বিশেষ পরিষেবা দেয় মার্কিন সরকার, যার মধ্যে অন্যতম হল তাদের গুপ্তচরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। পরিষেবার তত্ত্বাবধানে রয়েছে কালপেপার ন্যাশনাল সিকিওরিটি সলিউশনস সংস্থা। তাতে রয়েছেন মার্কিন গুপ্তচরবাহিনী সিআইএ-র কিছু প্রাক্তন আধিকারিক। সৌদি গুপ্তচর সংস্থার ডেপুটি আহমেদ আল-আসিরিকেও এই প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছিল। খাশোগ্গি হত্যা মামলায় এই মুহূর্তে সৌদি আরবে শুনানি চলছে তাঁর বিরুদ্ধে।
ডেভিড ইগনেসিয়াসের দাবি, মার্কিন বিদেশ দপ্তরের লাইসেন্স বাগিয়ে টিয়ার-১ গ্রুপ গোপনে একাধিক ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে সতর্ক করেছিল সিআইএ। তবে জামাল খাশোগ্গির হত্যার পর থেকে সৌদি সরকারের জন্য চালু ওই বিশেষ পরিষেবা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতাও বন্ধ রাখা হয়েছে আপাতত। যে টিয়ার-১ সংস্থা থেকে খাশোগ্গির খুনিরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, সেটি নিউইয়র্কের বেসরকারি বিনিয়োগ সংস্থা সারবারুশ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের মালিকানাধীন।
ইগনেসিয়াস নিজের প্রতিবেদনে লিখেছেন, খাশোগ্গি-হত্যার শেষ মুহূর্তের একটি অডিও টেপ সামনে এসেছে। তাতে মৃত্যুর আগে খাশোগ্গির আর্তনাদ থেকে তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে কাটার আওয়াজ সবই ধরা পড়েছে। এদিকে, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগ দাবি করল, খাশোগ্গি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১১ জনের শুনানি আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। তাই ওই মামলার শুনানি প্রকাশ্য আদালতে হওয়া দরকার। রাষ্ট্রসংঘের অতিরিক্ত বিচার সম্বন্ধীয় বিভাগের বিশেষ প্রতিনিধি অ্যাগনেস ক্যালামার্ড ওই হত্যা মামলার প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার হওয়া ১০ অভিযুক্তের নাম এবং তাদের বিচার সংক্রান্ত অবস্থান সম্পর্কে জানাতে সৌদি আরব প্রশাসনের উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: বাড়ছে চাপ, জলপথে বিপন্ন শরণার্থী উদ্ধারের কাজে ইতি টানতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.