সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বারুদের গন্ধ পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। ভাঙা বাড়িগুলি এখনও দুঃস্বপ্নগুলো মনে করিয়ে দেয়। এরপরও সামনের দিকে তাকাতে শিখেছে ইরাকের মসুল। প্রায় তিন বছর পর শহরের বাসিন্দাদের কাছে ইদ সত্যিকারের খুশি বয়ে এনেছে। ইরাকি সেনার দাপটে মসুলের প্রায় সত্তর ভাগ এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন আইএস জঙ্গিরা। ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা তাই আতরের গন্ধ এবার চেটেপুটে মেখেছেন। একেবারে বাঁধ ভাঙা আনন্দ। ছেলে-মেয়েদের হাতে নতুন জামা তুলে দিয়ে অতীত ভুলতে চেয়েছেন অভিভাবকরা।
৪ জুন, ২০১৪। তারিখটা মসুলবাসীর কাছে যন্ত্রণার। লজ্জার দিন। চার হাজার বছর পুরনো শহরকে সে সময় দখল করে নিয়েছিল আইএস। নিরীহদের হত্যা, অসংখ্য সৌধ, স্থাপত্য ধ্বংস করে খিলাফতের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল ওই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। মসুলকে দখলমুক্ত করতে ইরাকি সেনা কম চেষ্টা করেনি। দু পক্ষের লড়াইয়ে গত তিন বছরে উলুখাগড়ার মতো প্রায় ৫০ হাজার মসুলবাসী নিহত হয়েছেন। যা ওই জনপদের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। যারা বেঁচেছিলেন তাদের কেউ কেউ প্রতিবেশী দেশে পালিয়েছেন। যাদের সেই সুযোগ হয়নি তারা মৃত্যুর দিন গুনছিলেন। মসুল আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠেছিল বধ্যভূমি। এ বছরের জানুয়ারিতে থেকে ছবিটা পালটায়। ইরাকি সেনার দাপটে মসুলের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা থেকে আইএস উধাও হয়ে যায়। তিন বছর পর অবশেষে শান্তিতে ইদ পালন করতে পারলেন মসুলের যুদ্ধক্লিষ্ট মানুষগুলো। ইদ উপলক্ষ্যে শহরের পূর্ব প্রান্তে মসুলের শিশুরা মিলিত হয়। সেখানে গান-বাজনা, খাওয়া-দাওয়া, হুল্লোড়ে সামনে তাকাতে চেয়েছে নতুন প্রজন্ম। আইএসের জমানায় মসুলবাসী রমজান মাস পালন করলেও, উৎসবে ছিল নিষেধাজ্ঞা।
তবে প্রবীণরা বলছেন আসল ইদ পালন এখনও বাকি। টাইগ্রিসের তীরে মসুলের পশ্চিম প্রান্ত থেকে আইএস পিছু হটলেই তারা পুরোপুরি শান্তির স্বাদ পাবেন। তবে মসুলের বিখ্যাত আল নুরি মসজিদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার শোক অনেকে এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ভুক্তভোগীরা ভুলতে পারছেন না কীভাবে নিরীহদের মানবঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। পুতুলকে নিশানা করে কচিকাঁচাদের হাতে অস্ত্র ধরিয়েছিল আইএস যোদ্ধারা। এমনকী বন্দুক, বুলেটের হিসেব শিখিয়ে শৈশবকে হিংস্র করার চেষ্টা ছিল পুরোদমে। অন্ধকার অনেকটা কেটেছে। মসুলবাসীর আশা একদিন আইএস ইরাক থেকে মুছে যাবে। সেই জয়ের সেলিব্রেশন হবে আরও বড় করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.