সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন ড্রোন নামানোর পালটা জবাব দিতে ইরানের উপর সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছিল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার শেষ রাতে হামলার সব প্রস্তুতিও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অভিযান স্থগিত করে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি জানিয়েছেন, ইরান যদি পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করে, তাহলে আমেরিকা তেহরানের সবচেয়ে ভাল বন্ধু হবে। কিন্তু তা পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ না করে,তাহলে সোমবার থেকেই তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।
ট্রাম্পের এদিনের বক্তব্যে ভবিষ্যতে সামরিক অভিযানের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই আমেরিকারকে পালটা হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। সে দেশের শীর্ষ সেনাকর্তা জানিয়েছেন, ইরানের দিকে একটি গুলি ছুড়লে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলবে। বিপন্ন হবে আমেরিকা ও তার জোটসঙ্গীরা। এই হুমকির পরেই ইরাকের মাটিতে অবস্থিত বৃহত্তম মার্কিন বায়ুসেনা ঘাঁটির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এই উত্তেজনার আবহেই রবিবার তেহরান যাচ্ছেন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। ইরানের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমেরিকা-ইরান উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করবেন তিনি। এদিকে, যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বড় সিদ্ধান্ত নিল ডিজিসিএ। এবার থেকে ইরানের আকাশ এড়িয়েই উড়বে ভারতীয় বিমান।
বুধবার একটি মার্কিন নজরদারি ড্রোনকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ধ্বংস করে তেহরান। তারপরই দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে উঠেছে। ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ট্রাম্পের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন রিপাবলিকানরা। এর আগে পারস্য উপসাগরে একাধিক তেলের ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণের জন্য ইরানের উপর দায় চাপিয়েছিল ওয়াশিংটন। এর মধ্যেই শনিবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল শেকারচি। বলেছেন, “এই এলাকার পরিস্থিতি এখন ইরানের অনুকূলে। শত্রুরা, বিশেষত আমেরিকা ও তার জোটসঙ্গীরা যদি ভুল করেও সামরিক পদক্ষেপ করে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলবে।” যা সরাসরি পালটা যুদ্ধের হুঙ্কার বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
মার্কিন ড্রোনটির ধ্বংসাবশেষ ইরানের জলসীমা কুহ্ মুবারক এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ড্রোনটিকে নামানোর দশ মিনিট আগে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি তেহরানের। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ঘাঁটি থেকে ড্রোনটি উড়েছিল। ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য নিজেদের ভূখণ্ড বিদেশি শক্তিকে ব্যবহার করতে দেওয়ার দায়ে আমিরশাহির চার্জ দ্য অ্যাফেয়ারকে কড়া বার্তা দিয়েছে ইরানের বিদেশ মন্ত্রক।এই অবস্থায় উত্তেজনা দ্রুত প্রশমনের ডাক দিয়েছেন মধ্য প্রাচ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিটিশ বিদেশ প্রতিমন্ত্রী অ্যান্ড্রু মরিসন। রবিবার তিনি তেহরান যাচ্ছেন। আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা রক্ষায় ইরানের ভূমিকা এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে তাঁদের দায়িত্বের কথা তিনি সে দেশের শীর্ষ কর্তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চান।
ইরান সরকারের সঙ্গে খোলাখুলি, গঠনমূলক ও ইতিবাচক আলোচনা হবে বলে তাঁর আশা। উল্লেখ্য, ইরানের সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে একটি চুক্তি সই করেছিল আমেরিকা এবং ব্রিটেন। গত বছর সেই চুক্তি থেকে ট্রাম্প বেরিয়ে গিয়েছেন। উত্তেজনার আবহে বাগদাদের উত্তরে অবস্থিত বালাদ বায়ুসেনা ঘাঁটির নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ইরাক। মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে রাতে কারফিউ, ঘাঁটির ভিতর-বাইরে বাড়তি সেনা মোতায়েন, নিকটবর্তী এলাকায় টহলদারি চালানো হচ্ছে। গত সপ্তাহে সেখানে তিনটি মর্টার শেল আছড়ে পড়েছিল। তাই এই ব্যবস্থা বলে মনে করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.