সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ড্রোন ধ্বংস নিয়ে ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার আগুন জ্বলছিল। সেই আগুনে ঘি পড়ল পারস্য উপসাগরে ব্রিটিশ তৈলবাহী একটি জাহাজ আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, আইন ভেঙে হরমুজ প্রণালীতে ঢুকে পড়েছিল ব্রিটিশ জাহাজ স্টেনা এম্পেরো। শুক্রবার জাহাজটি ইরানের এক মাছধরা নৌকায় ধাক্কা মারে। জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন ভাঙার জন্য ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড শুক্রবারই জাহাজটিকে আটক করে। সেখানে ২৩ জন নাবিক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জন ভারতীয়। ভারতের বিদেশমন্ত্রক ইতিমধ্যে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছে। আটক ১৮ নাবিককে মুক্তির আবেদনও জানিয়েছে। ইরানের দাবি, সমুদ্র আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগেই ওই ট্যাঙ্কারটিকে আটক করা হয়েছে।
[ আরও পড়ুন: লাদেনকে ধরিয়ে ‘বন্দি’ চিকিৎসক, ইমরানের কাছে মুক্তির আবেদন করবেন ট্রাম্প! ]
দুর্ঘটনার পর সুইডেনে ট্যাঙ্কারটির অপারেটর সংস্থা স্টেনা বাল্কের তরফে জানানো হয়েছে, স্টেনা এম্পেরোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। জাহাজটির নিয়ন্ত্রণও আর নাবিকদের হাতে নেই। তারা আরও জানিয়েছে, ওই জাহাজে ১৮ জন ভারতীয় ছাড়াও, রাশিয়া, লাটভিয়া ও ফিলিপিন্সের মোট ২৩ জন কর্মী রয়েছেন। হরমুজ প্রণালীতে যেখানে জাহাজ ওই মাছধরা নৌকাকে ধাক্কা মেরেছে, সেখান দিয়ে অনেক তেলবাহী জাহাজ চলাচল করে। সারা বিশ্বে জলপথে যে পরিমাণ তেল বহন করা হয়, তার এক তৃতীয়াংশ ওই পথ দিয়ে যায়। কীভাবে সেখানে দুর্ঘটনা হল, তা নিয়ে শনিবার তদন্ত শুরু করেছে ইরান।আসলে ট্যাঙ্কারটির গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। ওমান উপসাগর পেরিয়ে হরমুজ প্রণালী ধরে পারস্য উপসাগরে নিজের রুট ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল স্টেনা বাল্ক। এই অংশটি আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যেই পড়ে। জানা গিয়েছে, আচমকাই গতিপথ বদলাতে বাধ্য হয় ট্যাঙ্কারটি।
এমনটা হল কেন? ইরানের দাবি, একটি মাছ ধরার জাহাজকে ধাক্কা মেরে সমুদ্র আইন লঙ্ঘন করে ব্রিটিশ ট্যাঙ্কারটি। তাই সেটিকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু, এমন কাণ্ডে ক্ষিপ্ত ব্রিটেন। অভিযোগ, দু’টি জাহাজকে আটক করা হয়েছে। ব্রিটিশ বিদেশ সচিব জেরেমি হান্ট হুঁশিয়ারির সুরেই বলেছেন, “সুষ্ঠু সমাধান না হলে এই পরিস্থিতির ফল হবে মারাত্মক।” প্রাথমিক ভাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেও, তেহরানের সঙ্গে কূটনীতির পথেই সমাধানের আশা করছে লন্ডন। এই ঘটনার পর নিজেদের জাহাজগুলিকে সাময়িক ভাবে হরমুজ প্রণালী এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। স্টেনা বাল্কের প্রেসিডেন্ট এরিক হ্যানেল এক বিবৃতি দিয়ে জানান, “জাহাজের কর্মীরা সুস্থ ও নিরাপদ রয়েছেন। আমরা ব্রিটেন এবং সুইডিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। বিপদ মুক্ত।”
[ আরও পড়ুন: জঙ্গি হাফিজের গ্রেপ্তারি ‘লোক দেখানো’, পাকিস্তানের অস্বস্তি বাড়িয়ে বার্তা ট্রাম্প প্রশাসনের ]
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তপ্ত পারস্য উপসাগর অঞ্চল। শুক্রবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, হরমুজ প্রণালীতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইরানের ড্রোন নামিয়েছে তাদের যুদ্ধজাহাজ ‘বক্সার’। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে ইরান। কিন্তু, এ সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তাপ বাড়ছে পারস্য উপসাগরে। উত্তেজনার পারদ আরও চড়েছে সৌদি আরবের নতুন সিদ্ধান্তে। ইরানকে ‘শিক্ষা’ দিতেই নিজের দেশে ফের মার্কিন সেনাকে থাকার অনুমতি দিয়েছে রিয়াধ। ইরানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিক্ততা দীর্ঘদিনের। পরমাণু চুক্তি নিয়ে সেই তিক্ততা চরমে ওঠে। পরবর্তী কালে ইরানের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা চাপানোয় পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়েছে। ব্রিটিশ ট্যাঙ্কার আটক হওয়ার ঘটনা তাতে নতুন করে ঘি ঢালল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.