সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঠিকমতো হিজাব না পরাই নাকি ছিল তাঁর অপরাধ। আর তার জেরেই নীতি পুলিশের মারে মৃত্যু হয়েছিল কুর্দ তরুণী মাহসা আমিনির। বছর দুয়েক আগের সেই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল ইরান। শুরু হয়েছিল হিজাব বিদ্রোহ। যা নাড়িয়ে দিয়েছিল সেদেশের ‘মোল্লাতন্ত্র’কে। তবে পরিস্থিতির যে খুব একটা বদল হয়েছে তা নয়। এখনও সেখানে নারীদের জন্য জারি রয়েছে নানা বিধিনিষেধ। যা না মানলে নেমে আসবেই কঠোর শাস্তির খাঁড়া। কিন্তু এবার সেই ইরানেই সরকারি মুখপাত্র হলেন একজন নারী। নাম ফাতেমেহ মোহাজেরানি। কেবল তিনিই নন, সরকারি বিভিন্ন পদে নিয়োগ করা হচ্ছে মহিলাদের। এখন ইসলামিক দেশটির প্রেসিডেন্টের আসনে রয়েছেন মাসুদ পেজেস্কিয়ান। যিনি সংস্কারপন্থী হিসাবেই পরিচিত। মনে করা হচ্ছে, এভাবেই হিজাব আন্দোলনের ক্ষততে প্রলেপ দেওয়ার প্রয়াস চলছে।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর পেজেস্কিয়ানকে বেছে নেন ইরানিরা। গত জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন তিনি। বুধবার ফাতেমেহ মোহাজেরানিকে নিয়োগ করে পেজেস্কিয়ানের মন্ত্রসভা। কে এই ইরান সরকারের নবনিযুক্ত মুখপাত্র? ১৯৭০ সালে আরাকে জন্মগ্রহণ করেন ফাতেমেহ। এর পর স্কটল্যান্ডের এডিনবরার হেরিয়ট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডক্টরেড ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যবসা এবং প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। সেদেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সরকারের আমলেও ফাতেমেহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সেখানকার টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল ট্রেনিং ইউনিভার্সিটি অব শরিয়তির প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৭ সালে ইরানের সেন্টার ফর ব্রিলিয়ান্ট ট্যালেন্টসের প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ফাতেমেহ।
জানা গিয়েছে, ফাতেমেহর পাশাপাশি পেজেস্কিয়ানের সরকার আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে মহিলাদের দায়িত্ব দিচ্ছে। গত সপ্তাহে পরিবেশ বিভাগের প্রধান হিসেবে সাইনা আনসারিকে নিয়োগ করেছেন তেহরান। তিনি ‘এনভারমেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ নিয়ে পিএইচডি করেছেন। ফলে এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সরকারের নানা উচ্চপদে মহিলাদের নিয়োগ করার পথ প্রশস্ত হচ্ছে ইরানে। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বলে রাখা ভালো, ২০২২-এর ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানে নীতি পুলিশের মারে মৃত্যু হয় ২২ বছরের মাহসা আমিনির। তার পর থেকেই হিজাবের শিকল ভেঙে ফেলতে বেনজির গণউত্থানের সাক্ষী থেকেছে ইসলামিক দেশটি। তীব্রতা কিছুটা কমলেও দেশের নানা প্রান্তে এখনও অব্যাহত হিজাব বিরোধী আন্দোলন। ফলে ক্ষমতায় এসে ক্ষত মেরামত করে পরিস্থিতির বদল ঘটাতে চাইছেন সংস্কারপন্থী পেজেস্কিয়ান। এর পিছনে ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেইরও সবুজ সংকেত রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। উল্লেখ্য, কট্টরপন্থার সঙ্গে শিয়াপন্থী দেশটির উদারপন্থীরা লড়ছেন বহুদিন ধরে। হিজাব প্রশ্ন-সহ মানবাধিকার, নারী স্বাধীনতার মতো একাধিক ইস্যুতে সেই লড়াইয়ে উত্তাল হয়েছে ইরান। ফলে পেজেস্কিয়ানের এই পদক্ষেপে আশার আলো দেখছেন ইরানের প্রগতিশীলরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.