সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইহুদি-আরব দ্বন্দ্বের ছাইচাপা বারুদে আগুন লেগেছে! যুদ্ধের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন। গাজার হামাস জঙ্গিদের বর্বরতা দেখে কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব। গত শনিবার ইজরায়েলের বুকে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে শিয়া জেহাদি সংগঠন হামাস তা কোনও অংশে ২৬/১১ বা ৯/১১ হামলার থেকে কম নয়। অনেকেরই ধারণা, শুরু হয়েছে তৃতীয় ইন্তিফাদা।
ইন্তিফাদা কি?
‘ইন্তিফাদা’ আরবি শব্দ। বাংলা তর্জমায় এর অর্থ প্রকম্পিত করা, জেগে ওঠা বা উত্থান। তবে প্রচলিত অর্থে ইজরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে প্যালেস্তিনীয় প্রতিরোধ আন্দোলন। সহজ ভাষায় ইহুদিদের হঠিয়ে ইসলামের জমি পুনরুদ্ধার করা। অতীতে দুটি ইন্তিফাদার সাক্ষী থেকেছে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন। প্রথম ইন্তিফাদা কিছুটা শান্তিপূর্ণ ভাবে শুরু হলেও রাশ চলে যায় আরব জঙ্গিদের হাতে যার ফলে নিশানা করা হয় নিরীহ ইজরায়েলি জনতাকে।
১৯৮৭ সালের ৯ ডিসেম্বর শুরু হয় প্রথম ইন্তিফাদা। চলে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ১৯৮৭ সালে জন্ম নেয় হামাস। গাজায় এই আন্দোলন কিছুটা শান্তিপূর্ণ ভাবে শুরু হলেও রাশ চলে যায় আরব জঙ্গিদের হাতে যার ফলে নিশানা করা হয় নিরীহ ইজরায়েলি জনতাকে। পালটা দেয় তেল আভিভও। সেই সংঘাতে প্রাণ হারান হাজারেরও বেশি প্যালেস্টাইনের নাগরিক। মৃত্যু হয় দেড়শো ইজরায়েলির। ১৯৯৩ সালে আমেরিকার পৌরহিত্যে ওয়াশিংটনে ইজরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইতঝাক রাবিন ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) প্রধান ইয়াসির আরাফাতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ওসলো অ্যাকর্ডের ভিত্তিতে শেষ হয় প্রথম ইন্তিফাদা।
ওসলো চুক্তি আশা জাগালেও ইহুদি-আরব সংঘাতের আগুন কিন্তু নেভেনি। ফলে ২০০০ সালে ভেস্তে যায় ক্যাম্প ডেভিড সামিট। আমেরিকা, ইজরায়েল ও পিএলও-র মধ্যে রফাসূত্র মেলার সমস্ত আশা নিভে যায়। শুরু হয় দ্বিতীয় ইন্তিফাদা। বিশ্লেষকদের অনেকের মতে তা চলে ২০০৫ পর্যন্ত। রক্তাক্ত সেই সময়ে ফিদায়েঁ হামলা হয় ইজরায়েলে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও গাজায় ইজরায়েলী ‘দখলদার’দের হঠানোর নামে হামাস তাণ্ডব শুরু করে। সব মিলিয়ে, প্রাণ হারাতে হয় ইজরায়েলের প্রায় হাজার ও প্যালেস্টাইনের কমপক্ষে দুহাজার মানুষকে।
শুরু হয়েছে তৃতীয় ইন্তিফাদা?
এই প্রেক্ষাপটে গত শনিবার থেকে ইজরায়েলে হামলা শুরু করেছে শিয়া জঙ্গি সংগঠন হামাস। জমি, সাগর ও আকাশে যেভাবে লড়াই শুরু করেছে হামাস তা পার্ল হারবার হামলার শামিল। ইহুদি রাষ্ট্রটির কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এহেন হামলার আঁচ কেন পায়নি তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এটা তৃতীয় ইন্তিফাদার শুরু বললেও ভুল বলা হবে না। এর প্রস্তুতি চলছিলই। ২০২১ সালের মে মাসে প্যালেস্তাইনের জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইজরায়েল। জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুগামীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। তার পর তা ক্রমে ভয়াবহ আকার নেয়। গাজা থেকে হামাসের রকেট হামলার পালটা বিমান হানা চালায় ইজরায়েল। তখন থেকেই এহেন হামলার পরিকল্পনা করছে হামাস।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্যালেস্টাইনের শাসনভার রয়েছে প্যালেস্তিনিয়ান ন্যাশনাল অথরিটির (পিএনএ) হাতে। তবে গাজার রাশ কিন্তু হামাসের হাতেই। প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে প্রেসিডেন্ট বলে স্বীকার করে না তারা। গাজায় অবাধে কার্যকলাপ চালায় ইসলামিক জেহাদ, হেজবোল্লাহর মতো জঙ্গি সংগঠনটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.