নিজস্ব সংবাদদাতা: কোথায় বর্ধমান জেলার বার্নপুর আর কোথায় ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন! কিন্তু বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন আর ঐতিহ্যপূর্ণ সেই লন্ডন শহরেই ২০১৩ সালে রেস্তোরাঁ খুলে মাত্র তিন বছরের মধ্যে ব্যবসা জমিয়ে দিয়েছেন বার্নপুরের মেয়ে রোমি গিল৷ শুধু ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছেন বললে সবটা হয়তো বলা হবে না৷ রোমির জনপ্রিয়তা এখন লন্ডন শহরে এতটাই যে, ২৩ বছরের এই ভারতীয় মেয়েকে ব্রিটিশ সরকার জানাচ্ছে বিশেষ সম্মান৷
এই ব্যাপারে রোমির কাছে সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকারের চিঠি এসে পৌঁছেছে৷ ফেসবুকে এই কথা জানিয়ে রোমি লিখেছেন, “খুব সম্ভবত বাকিংহ্যাম প্রাসাদে হবে এই অনুষ্ঠান৷ মোট ১১৪৯জন ব্যক্তিকে সম্মান জানাবে ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের জন্য৷ তার মধ্যে আমিও আছি৷ ঠিক কবে হবে অনুষ্ঠানটি তা আমিও জানি না৷ তবে, মাস দুয়েকের মধ্যেই হবে খুব সম্ভবত৷”
রোমিকে ব্রিটিশ সরকার দিচ্ছে দ্য মোস্ট এক্সেলেন্ট ইন ব্রিটিশ এম্পায়ার সম্মান৷ ২০০৮ সালে বার্নপুরের মেয়ে রোমি লন্ডনে পা রাখেন৷ তাঁর বাবা কাজ করতেন বার্নপুরের ইস্কো কারখানায়৷ ওঁরা থাকতেন বার্নপুরের নিউটাউন এলাকায় ইস্কো কোয়ার্টারে৷ বার্নপুর রিভারসাইড স্কুলে পড়তেন রোমি৷ সেখান থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন৷ এরপর ভর্তি হন আসানসোল গার্লস কলেজে৷ কিন্তু কলেজের পড়াশোনা শেষ করার আগেই লন্ডনে চলে আসতে হয় রোমিকে৷ ইংল্যান্ডের রাজধানী শহরে পা রাখার কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যায় রোমির৷
বর্তমানে দুই সন্তানের মা রোমি ফেসবুকে জানিয়েছেন, “দিনে ১৬ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয় আমাকে৷ কীভাবে নিজের ব্যবসাটাকে অচেনা, অজানা এই শহরে দাঁড় করিয়েছি– কেউ ভাবতেও পারবে না৷ একটা কথা বলতে পারি– কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই৷ পরিশ্রম করলে তার ফল একদিন না একদিন মিলবেই৷”
২০০৮ সালে প্রথমে ক্যাটারিং-এর ব্যবসা শুরু করেন রোমি৷ সেই ব্যবসা করতে করতেই তাঁর মাথায় আসে নিজস্ব একটি রেস্তোরাঁ খোলার কথা৷ কারণ, লন্ডন শহরে এখন প্রচুর ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশি-সহ এশিয়া মহাদেশের মানুষ থাকেন৷ ঝাল-মশালাদার ভারতীয় খাবার এঁদের কাছে প্রিয় হবেই, এমন একটা বিশ্বাস গোড়া থেকেই ছিল রোমির৷ আর হয়েছেও তাই৷ ‘রোমিস কিচেন’ এখন লন্ডনের ভোজন-রসিকদের অবশ্য-গন্তব্যে পরিণত হয়েছে৷
এ দিকে, নিজেদের স্কুলের প্রাক্তন এই ছাত্রীর সাফল্যে দারুণ খুশি বার্নপুর রিভারসাইড স্কুলের বর্তমান ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবাই৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশীলকুমার সিনহা জানালেন, “আমাদের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী রোমি গিলের এই সাফল্যের খবর আমিও শুনেছি৷ নিঃসন্দেহে ভাল খবর, ইতিবাচক দৃষ্টান্ত৷ এই দৃষ্টান্ত আরও অনেককে প্রেরণা দেবে৷ স্কুলের পক্ষেও এটা আনন্দ আর গৌরবের ব্যাপার৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.