সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “আফগানিস্তানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা আমেরিকার একার লড়াই নয়। এটা ভারতের লড়াই। পাকিস্তানেরও লড়াই। সুতরাং এই লড়াইটা আমেরিকা কেন একা লড়বে? কারণ সন্ত্রাসবাদ সমস্যা ভারতেরও। সমস্যা পাকিস্তানেরও। তাহলে ভারত এবং পাকিস্তানও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে, তালিবানের বিরুদ্ধে লড়ুক।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিস্ফোরক বিবৃতির পর দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ গড়ে ওঠা নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে এদিন ট্রাম্প ওভাল অফিসে বসে জানিয়ে দিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে আপাতত মার্কিন সেনা সরছে না।
[আরও পড়ুন: হংকংয়ে হুলুস্থুল, ব্রিটিশ কনসুলেটের কর্মীকে আটক করল চিন]
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, আফগানিস্তানে দুই দশকের লড়াইয়ে আর্থিক ও সামরিক দিক দিয়ে শুধু ক্ষতির বহর বেড়েছে আমেরিকার। লাভের লাভ কিছু হয়নি। তাই দুই বন্ধু দেশ ভারত ও পাকিস্তানকেও এবার সরাসরি আমেরিকার রণভূমিতে লড়াইয়ে নামার ডাক দিয়েছেন ট্রাম্প।
কিন্তু বাস্তবটা হল, পাকিস্তান ও ভারত কোনওদিন এক অক্ষে থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবেই না। কারণ, ভারত ও আফগানিস্তান দুই দেশের সরকারই মনে করে, আফগানিস্তানে ইসলামি সন্ত্রাসের বাড়বাড়ন্ত পুরোটাই পাক সেনা ও আইএসআইয়ের মদতে। তালিবানের সৃষ্টিকর্তা, আল কায়দাকে মদত দেওয়া, লাদেন ও মোল্লা ওমরকে আশ্রয় দেওয়া পুরোটাই পাকিস্তানের সেনা ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলির সক্রিয়তায় সম্ভব হয়েছে। তাহলে আফগানিস্তানে কীভাবে পাকিস্তান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে? সেই যুদ্ধে ভারত এবং আফগানিস্তানের সেনা কেনই বা পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়বে? কারণ পাকিস্তানই দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসের মদতদাতা বলে প্রধান অভিযুক্ত। তাছাড়া পাকিস্তান কোনওদিনই চায় না ভারত তার সেনা পাঠাক আফগানিস্তানে। ফলে ট্রাম্পের ব্যাখ্যা ও সমীকরণ বাস্তবে কার্যকর হওয়া সম্ভব নয়।
ভারত ও পাকিস্তান পাশে থেকেও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের রুখতে লড়াই চালাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেন, ‘দেখুন এখানে ভারত আছে। তারা লড়ছে না। আমরা সেই লড়াই চালাচ্ছি। পাশের দরজাতেই আছে পাকিস্তান। তারা প্রায় লড়ছেই না। এটা ঠিক নয়, আমেরিকা ৭০০০ মাইল দূরে রয়েছে। অথচ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা আমেরিকাকে একাই লড়তে হচ্ছে। ’
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু ভারতই নয়, এ ক্ষেত্রে সাহায্য চান ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কেরও। তাঁর দাবি, শুধুমাত্র আমেরিকাই ৭০০০ মাইল দূর থেকে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আফগানিস্তানে যে সব দেশের জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে সেই দেশগুলি রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক কেন লড়বে না? কারণ, ইসলামিক স্টেট ও তালিবান তো ওই সব দেশগুলিরই ঘোষিত শত্রু।
আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেটের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়া, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, তুরস্ককেও তাদের লড়াইটা চালাতে হবে। আমরা আইএস-এর খিলাফত বা ইসলামিক সাম্রাজ্যকে একশো শতাংশ ধুয়ে দিয়েছি। রেকর্ড সময়ে আমি এই কাজ করেছি। কিন্তু অন্যান্য যে দেশের আশপাশেও ইসলামিক স্টেট (আইএস) রয়েছে, তাদেরও কিছু ক্ষেত্রে কিছু করা দরকার।”
তিনি আরও বলেন, ‘এই দেশগুলিকেও লড়াই করতে হবে কারণ আমরা আফগানিস্তানে কি আরও ১৯ বছর থাকতে চাই? আমার তা মনে হয় না। কাজেই রাশিয়া, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতের মতো দেশগুলিকেও কিছু ক্ষেত্রে লড়তে হবে।’ একদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে এখনও বাহিনী পুরোপুরি সরাবে না আমেরিকা। তালিবান যাতে কোনওভাবেই ফের মাথাচাড়া দিয়ে না-ওঠে, তা নিশ্চিত করা হবে। ট্রাম্প এও বলেন, আফগানিস্তান অভিযান করতে গিয়েই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিনাশ হয়। আফগানিস্তানে যুদ্ধে হেরে গিয়েই রুশ সেনাকে পালাতে হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে রাশিয়া তৈরি হয়।
[আরও পড়ুন: পৃথিবীর অক্সিজেন ভাণ্ডার এখন বিষাক্ত গ্যাসের খনি, জ্বলছে আমাজনের অরণ্য]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.