সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কুর্সিতে বসার আগে প্রাক্তন স্ত্রীর কাছ থেকে তীব্র কটাক্ষের শিকার হলেন হবু পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান। ইমরানের দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান বলেছেন, পাক সেনাবাহিনীর জুতা পালিশের লোক দরকার ছিল। সেই লোক তারা পেয়ে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে। তাদের বশংবদ একটা ‘পুতুল প্রধানমন্ত্রী’ দরকার ছিল। ইমরান সেই জায়গাটা নিতে পেরেছেন।
‘কাপ্তান সাহাব’ ইমরানের বিরুদ্ধে রেহামের বিষোদ্গার, ভারতের বিরুদ্ধে সেভাবে প্রচারে মুখ খোলেননি ইমরান। কারণ, সেখানে তাঁর অনেক বন্ধু আছেন। তাছাড়া ভারতে যথেষ্ট জনপ্রিয়ও ইমরান। মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জেতার পর। কারণ পাক সেনার নির্দেশেই ইমরান বললেন, কাশ্মীর আসল সমস্যা। ভারত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে সমস্যা পাকাচ্ছে। এই কথাটা ভোটের আগে বলেননি তিনি। এখন পাক সেনাকে খুশি করতে জাতীয়তাবাদী নেতা সাজার চেষ্টা করছেন।
[ডোকলামে ফের তৎপর হচ্ছে চিন, মার্কিন রিপোর্টেও উদাসীন নয়াদিল্লি]
রেহাম বলেছেন, ইমরান কীরকম দ্বিচারী দেখুন, নওয়াজ শরিফ ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়াতে চেয়েছিলেন, তখন ইমরান তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলে সমালোচনা করেছিলেন। এমনকি ভারতকে মোস্ট ফেভার্ড নেশন বা এমএফএন-এর তকমা দেওয়ারও তীব্র বিরোধিতা করে তা আটকে দেওয়ার মূলে ছিলেন তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান।অথচ ভোটে জিতেই সুর বদলে ইমরান বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে চান তিনি। কিন্তু ভারতই নাকি আলোচনার রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।
রেহামের কটাক্ষ, পাক সেনার কথা মতোই চলবেন ইমরান। কারণ দেশ চালানোর বা রাজনীতি করার কোনও অভিজ্ঞতা নেই ইমরানের। ইমরানকে ইসলামাবাদের মসনদে বসানোর পরিকল্পনা গত প্রায় তিন বছর ধরে করছিল পাক সেনা। নির্বাচন স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠুভাবে হলে এতো ভোটে জিততে পারতেন না ‘কাপ্তান সাব’। ভারত হোক বা পাকিস্তান ইমরানকে পাক সেনা যা বলবে তিনি ঠিক সেই কাজটাই করবেন, কারণ, তাঁর নিজস্ব কোনও আদর্শ নেই।
পাকিস্তানের নির্বাচনের আগে তাঁর বই প্রকাশ ইমরানের ভাবমূর্তিতে কোনও দাগ লাগাতে পারেনি। সেই প্রশ্নের জবাবে রেহামের মন্তব্য, উপমহাদেশে এধরনের যৌন কেচ্ছা কোনও পুরুষের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে পারে না। অথচ কোনও মেয়ের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটলে ফল হয় ভিন্ন। রেহামের মতে, তিনটে বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ দুর্নীতিগ্রস্ত ইমরানকে পাকিস্তানে ‘হিরো’ বানিয়েছে।
এদিকে, ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। তার আগেই প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছেন ইমরান খান। ইমরানের নয়া সরকারে কারা থাকবেন, কাদের নিয়ে জোট সরকার গড়া হচ্ছে, সেই ছবিটা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে ছোট ছোট দলগুলি নিয়ে জোট সরকার গড়ছেন তিনি তা প্রায় নিশ্চিত। জোটের প্রধান পরিচালক হচ্ছে তাঁর দল পাকিস্তান-তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
ডন নিউজ, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, জিও নিউজ, সামা টিভি সহ বেশ কিছু পাক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকার গঠনের পরই সপারিষদ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে চান ইমরান। তাই ইমরানের ইচ্ছে মেনেই তাঁকে ১৪ আগস্টের আগে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানাতে চলেছেন পাক প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেন। তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাসিরুল মুল্ক জানিয়েছেন, ইমরান শপথ নিচ্ছেন ১৪ আগস্টের আগে। সে ব্যাপারে প্রস্তুতি চলছে।
[সন্ত্রাস-উগ্রপন্থাকে ছুড়ে ফেলে গণতন্ত্রেই আস্থা পাক নাগরিকদের]
ইমরানের দল পিটিআই জিতেছে ১১৫টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে তাদের দরকার আর ২২টি আসন। এজন্য ইমরানের দল জিডিএ, এমকিউএম, এমএমএ, বিএপি-সহ ছোট দলগুলির সমর্থন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিরোধী আসনে বসতে চলেছে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ, বিলাবল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি। নওয়াজের দল জিতছে ৬৪টি আসনে। ভুট্টোর দল জিতেছে ৪৩টি আসনে। পাক সংবাদমাধ্যমগুলি জানাচ্ছে, সরকার গঠনের প্রক্রিয়া তুঙ্গে। এজন্য ইমরানের দলের নেতাদের সঙ্গে ছোট দলগুলির নেতাদের ঘন ঘন বৈঠক চলছে।
রবিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের তরফেও পাক ভোটে অনিয়মের নিন্দা করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, পাক ভোটের ময়দান আদৌ এ বার সুষ্ঠু ছিল না। প্রচার পর্বে পরিকল্পিত ভাবেই দমিয়ে রাখা হয় নওয়াজ়ের দলকে।
এদিকে, পাকিস্তানে মোহাজিরদের শক্তিশালী সংগঠন ‘ভয়েস অফ করাচি’র নেতা নাদিম নুসরত বলেছেন, ইমরানের জয় অবৈধ। পাক সেনার মদতে ইমরানকে জেতানো হয়েছে। এ জন্য পকিস্তানের বিচারবিভাগকে জোর করে কাজে লাগানো হয়েছে। পাক নির্বাচন কমিশনের উচিত গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাতিল করে ২৭২টি আসনে ফের নতুন করে ভোট নেওয়া। কারণ সপরিবার নওয়াজকে কারাবন্দি করতে বিচারবিভাগকে ও তদারকি সরকারকে চাপ দিয়ে কাজে লাগিয়েছে সেনা ও আইএসআই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.