সংবাদ প্রপতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাসপোর্ট হারিয়েছেন। চাকরি নেই। মাথা গোঁজার নির্দিষ্ট ঠাঁই পর্যন্ত নেই। ওয়াশিংটনের রাস্তায় বসে হাতে আঁকা ছবি বিক্রি করে কায়ক্লেশে দিন গুজরান খড়গপুর আইআইটি-র প্রাক্তনীর। মর্মান্তিক এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়েছে দেশে। কেন্দ্র সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করবে বলে জানিয়েছে ওই মহিলার পরিবারের সদস্যরা।
[ দেশের সম্পদের ৭৩ শতাংশই কুক্ষিগত করেছে ১ শতাংশ ধনী ]
জয়শ্রী গিল। কলকাতার নিউ আলিপুরে বাড়ি। তখন ছিলেন জয়শ্রী তলাপাত্র। পিছু ফিরে দেখলে জানা যাচ্ছে, ঝকঝকে কেরিয়ার ছিল তাঁর। ১৯৯১ সালের খড়গপুর আইআইটি-র প্রাক্তনী। কাজ করেছেন একাধিক বড় তথ্য ও প্রযুক্তি সংস্থায়। টিসিএস থেকে কগনিজেন্টের মতো বড় সংস্থার নাম তাঁর সিভিতে। ২০১৪ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু তারপরই জীবনে ছন্দপতন। কোনও এক কারণে সবকিছু হারাতে থাকেন জয়শ্রী। এখন একেবারে সহায়সম্বলহীন।
[ সন্ত্রাসের আবার ভাল-মন্দ কী? দাভোসে সওয়াল মোদির ]
ওয়াশিংটনের রাস্তায় তাঁকে হাতে আঁকা ছবি বিক্রি করতে দেখেন কিছু প্রবাসী ভারতীয়। তিনি ভারতীয় জানার পরই কৌতূহল বাড়ে তাঁদের। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে এই বিশেষ তথ্য। জানা যায় তাঁর করুণ জীবনের কাহিনি। সেই ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপরই দেশে তাঁর পরিবারের লোকেরা এ বিষয়ে জানতে পারেন। তাঁর বোন মৈত্রীয় তলাপাত্র জানাচ্ছেন, এ বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানতেন না। গতবছর সেপ্টেম্বর জয়শ্রীর সঙ্গে তাঁদের শেষ কথা হয়। তখনও ঘুণাক্ষরে এরকম পরিস্থিতির আঁচ পাননি। এই ভিডিও দেখার পর তাঁরা রীতিমতো মর্মাহত। জয়শ্রীকে সাহায্য বা দেশে ফেরাবার জন্য সরকারের দ্বারস্থ হতে চলেছেন তাঁরা।
[ এবার হিন্দু রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াল রাষ্ট্রসংঘ ]
জয়শ্রী জানাচ্ছেন, এইচসিএল নামক সংস্থায় তিনি শেষ কাজ করেছেন। প্রভাত পেজ নামে জনৈক প্রবাসী ভারতীয় প্রায় ঘণ্টাখানের কথা বলেন জয়শ্রীর সঙ্গে। তিনিই সোশ্যাল মিডিয়া মারফত বাকিদের এ কথা জানান। জানা যায়, প্রায় ১৮ বছর মার্কিন মুলুকে আছেন জয়শ্রী। বিয়েও করেন সেখানে। পরে বিচ্ছেদ হয়। একসময় ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সান ফ্রান্সিসকো চষে বেড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, যে অ্যাপার্টমেন্টে তিনি থাকতেন সেখানে কিছু সমস্যা হয়। হেনস্তার মুখে পড়েন জয়শ্রী। ঠিক সেই সময়েই সিয়াটলে একটি সংস্থায় চাকরি প্রায় পাকা হয়ে যায়। তিনি সিয়াটলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু যে ইন্টারভিউ হওয়ার কথা ছিল তা আর হয়নি। ফলে চাকরিও পাননি। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো রাস্তায় নিজের সার্টিফিকেটগুলো হারিয়ে ফেলেন। এখন তাঁর কাছে আছে বলতে সেসবের ফটোকপি। কিন্তু তা দেখিয়ে না জুটছে চাকরি। না থাকার জায়গা। জয়শ্রীকে অনেকেই বাস্তুহারাদের থাকার জায়গায় মাথা গোঁজার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বদলে তিনি মোটেলে থাকাই বেছে নিয়েছেন। রাস্তায় বসে হাতে আঁকা ছবি বিক্রি করেন। বলা যায়, ভিক্ষাই করেন। যেটুকু যা অর্থ পান তাতে কায়ক্লেশে কোনওরকমে দিন গুজরান।
[ বিনিয়োগ করুন ভারতে, বিশ্বমঞ্চে শিল্পপতিদের আহ্বান মোদির ]
কিন্তু এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও কেন বাড়িতে জানানোর চেষ্টা করেননি? জয়শ্রীর অভিযোগ, তিনি কলকাতায় একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু পরিবারের তরফে কোনও সাহায্য করা হয়নি। অন্যদিকে পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁরা অবগতই ছিলেন না। আর্থিক সংকটের দরুণ জয়শ্রীর শরীরও ভেঙে পড়েছে। তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরুন, প্রবাসী ভারতীয়দের প্রার্থনা এখন একটাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.