সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুই দেশ। দুই গণতন্ত্র। ভারত যেমন বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, আমেরিকাও তেমন বিশ্বের প্রাচীনতম। আবার দু’দেশেরই মাথাব্যথার কারণও একই। ইসলামিক সন্ত্রাস এবং অনুপ্রবেশ। তাই রবিবার ‘হাউডি মোদি: শেয়ার্ড ড্রিমস, ব্রাইট ফিউচার’ জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেই চিরাচরিত সমস্যার উপরই আলোকপাত করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর নাম না করে বিঁধলেন ভারতের পড়শি দেশ, পাকিস্তানকে।
[আরও পড়ুন: মোদিতেই পূর্ণ আস্থা ট্রাম্পের, হিউস্টনের মঞ্চে একে অপরকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন]
রবিবারের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বললেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ভারত এবং আমেরিকা, দু’দেশই বোঝে দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে সীমান্ত সুরক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্ত
সুরক্ষা যেমন আমেরিকার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই ভারতের জন্যও জরুরি। আবার অনুপ্রবেশের সমস্যাও দু’দেশেই রয়েছে। মেক্সিকো সীমান্তে অনুপ্রবেশ রুখতে ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে আমেরিকা। সুতরাং এই অনুপ্রবেশকারীদের কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করার ইসলামী সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে ভারত এবং আমেরিকা। ইসলামী সন্ত্রাসের হাত থেকে নিরীহদের রক্ষা করতে ভারত এবং আমেরিকা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।” ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পরই করতালিতে ফেটে পড়ে গোটা এনআরজি স্টেডিয়াম। দর্শকাসনে বসে সম্মতিসূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও। ট্রাম্পের বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যায়, নাম না করে ইসলামী সন্ত্রাস প্রসঙ্গে আদপে তিনি পাকিস্তানকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। আর পাশাপাশি ইসলামাবাদকে এই বার্তাও দিয়েছেন যে, ইসলামী সন্ত্রাসকে নির্মূল করতে ওয়াশিংটন সব সময়ই নয়াদিল্লির পাশে থাকবে। পরে মোদির বক্তব্যেও অবশ্য সন্ত্রাস প্রশ্নে ট্রাম্পের সেই কড়া অবস্থানেরই প্রতিফলন দেখা যায়। মোদি বলেন, “সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে আমাদের পাশে আছেন ট্রাম্প। ভারতের প্রতি বিদ্বেষ থেকে সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে একটি দেশ। সেই দেশকে বিশ্ব চেনে।”
ভাষণের শুরুতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট মোদিকে ‘হোয়াইট হাউসের প্রকৃত বন্ধু’, ‘আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু’ বলে ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি মোদিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানান। ট্রাম্প বলেন, “মোদির নেতৃত্বে দারিদ্র্য দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। অসামান্য কাজ করেছেন মোদি। ওঁর নেতৃত্বে ভারতীয়রা এগিয়ে চলেছে।” শুধু তাই নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, শীঘ্রই ‘টাইগার ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি যৌথ প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীও হতে চলেছে। তাঁর কথায়, আগের তুলনায় ইন্দো-মার্কিন নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়েছে। ভারতে কাঁচা তেল রপ্তানি ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, রেকর্ড হারে বেড়েছে গ্যাস রপ্তানিও। টেক্সাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্ভার আছে। তাই আগামী দিনে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। দু’টি জাপানি সংস্থা টেক্সাসে বিনিয়োগ করবে। আবার ভারতীয় সংস্থা জেএসডব্লু স্টিলও আমেরিকায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে ঘোষণা করেছে। এর পাশাপাশি আমেরিকায় ভারতীয়দের কর্মসংস্থানও বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, মহাকাশে আধিপত্য বিস্তারে ভারত-আমেরিকা যৌথভাবে কাজ করবে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ট্রাম্প এদিন মোদির কাছে ভারতে তাঁর ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’-এর জন্য নিজেই আমন্ত্রণ চেয়েছেন। উপলক্ষ্য অবশ্যই এনবিএ ইভেন্ট। ট্রাম্প বলেছেন, “খুব শীঘ্রই ভারতে অনুষ্ঠিত হবে এনবিএ বাস্কেটবল। আগামী সপ্তাহে মুম্বইয়ে হবে প্রথম এনবিএ গেম। প্রধানমন্ত্রী, আমি কি নিমন্ত্রিত?” মোদির মুখে হাসি দেখে ট্রাম্পের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া, “অবাক হবেন না, যদি আমি এসে পড়ি! সতর্ক থাকবেন কিন্তু! আমি আসতে পারি।”
[আরও পড়ুন: হীরাবেনের টিপসেই মেনু, হিউস্টনে মায়ের রান্নার স্বাদ পেলেন প্রধানমন্ত্রী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.