সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আন্দোলন, গণহত্যার প্রতীক – কলঙ্ক। কিন্তু তিয়েনআনমেন (Tiananmen) ইতিহাসের সমস্ত স্মারক, প্রতীকী ভাস্কর্য সরিয়ে দেওয়া হল হংকংয়ের (HongKong) দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে। রাতারাতিই সেখান থেকে সরানো হয়েছে দীর্ঘ স্তম্ভ যা ‘পিলার অফ শেম’ নামে পরিচিত। এই স্তম্ভের গায়ে অজস্র খোদাই ছিল তিয়ানআনমেন স্কোয়্যারে নিহতদের অনেকের মূর্তি। দিনের আলোয় দেখা গেল, তা আর নেই। এই ঘটনায় হংকংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। সমালোচকরা বলছেন, এভাবে আগ্রাসন দেখিয়ে কলঙ্ক মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে চিন।
ইতিহাস মুছে দিতে কতটা যে মরিয়া চিন (China), তার খুব স্পষ্ট ছাপ রইল লিংনান বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অফ হংকং। সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে পড়ুয়ারা দেখেন, ওই স্তম্ভটি শুধু সরিয়ে ফেলাই হয়নি। তাকে দু’ভাগে ভাগ চিরে কাপড়ে মুড়ে ক্রেনের সাহায্যে ওই জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়ে রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুদামে। ক্যাম্পাসে এতদিনের চেনা পরিচিত ছবি আচমকাই বদলে যাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন কোনও কোনও পড়ুয়া।
ইতিহাস বলছে, তিয়েনআনমেনের এই ঐতিহাসিক স্মারক হংকংবাসীর কাছে বেদনার জ্বলন্ত ইতিহাস। এই স্তম্ভটি ১৯৮৯ সালে ডেনমার্কের এক ভাস্কর তৈরি করেছিলেন। সেই বছরই চিনের অন্তর্ভুক্ত হয় হংকং। বেজিংয়ের বিখ্যাত তিয়েনআনমেন স্কোয়্যারে সেনার অগ্রগতি রুখতে পথে নামে ছাত্রসমাজ। তাদের রুখতে নির্বিচার গুলি চালিয়ে এই স্কোয়্যারের দখল নেয় চিন সেনা। গুলিতে প্রাণ হারান বহু প্রতিবাদী। সেটাই ‘তিয়েনআনমেন গণহত্যা’ বলে হংকংয়ের ইতিহাসে রক্তাক্ত অক্ষরে লেখা হয়েছে। যা হংকংয়ে আজকের ছাত্রসমাজের কাছে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
তারপর কালচক্রে পেরিয়েছে বেশ খানিকটা সময়। চিনা আগ্রাসনের আরও কত নমুনার সাক্ষী হংকং। এবার নিজেদের কুকীর্তির ইতিহাস মুছে দেওয়ার পথে নির্মমভাবে হাঁটল চিন। সম্পূর্ণ বিনষ্ট করা হল হংকংয়ের আবেগের স্মারক স্তম্ভ। তবে হংকংয়ের উপর চিনের আগ্রাসন গত বছর থেকেই বেড়েছে। জাতীয় সুরক্ষা আইন জারি করে গণতন্ত্রকামীদের উপর নির্মম অত্যাচার চলেছে। সম্প্রতিই তিয়েনআনমেন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে হংকংয়ের ধনকুবের তথা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম মুখ জিমি লাইকে। একইসঙ্গে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে গণতন্ত্রকামী প্রাক্তন সাংবাদিক গাইনেথ হো এবং প্রাক্তন মানবাধিকার সংক্রান্ত আইনজীবী চাউ হাং তুংকে। আর এসবের পর এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও তিয়েনআনমেনকে মুছে দেওয়ার মরিয়া প্রয়াস চালাল চিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.