সুকুমার সরকার, ঢাকা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর, হবিগঞ্জ ও মাগুরা কাণ্ডের রেশ না কাটতেই এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান গোপালগঞ্জে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হল। পুলিশের এএসপি আমিনুল ইসলাম জানান, সোমবার রাতে জেলার রঘুনাথপুর কোটাবাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরটি ভাঙচুর করা হয়।
গোপালগঞ্জ মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিপন বিশ্বাস সংবাদ মাধ্যমকে জানান, কালীপুজো উপলক্ষে সোমবার রাতে রঘুনাথপুর দক্ষিণপাড়ার প্রাইমারি স্কুলের মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে কয়েকজন যুবক মহিলাদের উত্ত্যক্ত করে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে ওই যুবকরা মন্দিরে হামলা চালিয়ে হিন্দু দেবতাদের প্রতিমা ভাঙচুর করে। মন্দিরের পূজারী গীতা বিশ্বাস জানান, “রাত সাড়ে ১২ টা নাগাদ শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি ৮-১০ জন যুবক লাঠি নিয়ে ছোটাছুটি করছে। তখন আত্মরক্ষার জন্য মেয়েরা আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেই সময়ই যুবকরা মন্দিরে হামলা চালায় এবং প্রতিমা ভাঙচুর করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবারও এলাকার হিন্দুরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এদিনই ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও বাড়িঘর পরিদর্শন করে শাসকদল আওয়ামি লিগের একটি প্রতিনিধি দল।
এদিকে, রবিবার ফেসবুকের একটি ছবিকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরে হিন্দুদের ১৫টি মন্দির ও ১২৫টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। মারধর করা হয় হিন্দুধর্মাবলম্বী লোকজনকে। পুরোহিত নরেন্দ্র চক্রবর্তী জানান, হামলাকারীরা মন্দিরের সব সোনা ও রুপো নিয়ে গিয়েছে। কাশীপাড়া গ্রামের ১২টি বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, ফেসবুকে ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগ তুলে মৌলবাদীরা কয়েকঘণ্টা মিছিল-সভা-সমাবেশে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিবেশকে উত্তপ্ত করে। অথচ এসব দেখেও নির্বাক ছিল স্থানীয় প্রশাসন। ঘটনার দিন স্থানীয় খেলার মাঠে যারা উস্কানিমূলক মন্তব্য পেশ করেছিল, মামলা হওয়া সত্ত্বেও তারা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চাতলপাড় ইউনিয়নের সুরুজ আলি, নাসিরনগর উপজেলা কমপ্লেক্স মসজিদের ইমাম মুখলেছুর রহমানরা উস্কানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দত্ত বলেন, শনিবারের বিক্ষোভের পর থেকেই তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিকে বারবার ফোন করে পুলিশ মোতায়েনের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম চৌধুরির দাবি, তাঁরা বুঝতে পারেননি সভার অনুমতি দিলে এমন কাণ্ড ঘটতে পারে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ২৯টি পরিবারকে ৫ হাজার করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি মন্দিরকে ১০ হাজার করে অর্থ দেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.