সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দ্বিতীয় দফায় আফগনিস্তানের (Afghanistan) ক্ষমতা দখলের পর ধীরে ধীরে কাবুলে জড়ো হচ্ছেন তালিবানের শীর্ষ নেতৃত্ব। আর তাঁদের মধ্যেই রয়েছেন হাক্কানি নেটওয়ার্কের (Haqqani Network) প্রতিনিধিও। যাদের আফগানিস্তানের সবচেয়ে ‘নৃশংস’ জঙ্গি বললে অত্যুক্তি করা হবে না। যাদের সমঝে চলে ইসলামিক স্টেট, আল কায়দার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীও। পূর্ব আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘাঁটি গাড়া এই জঙ্গিদের নেপথ্যের শক্তি আসলে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (ISI)। তাই নয়া আফগান সরকারে হাক্কানি নেটওয়ার্ক কতটা গুরুত্ব পায়, তা নিয়েই চিন্তায় নয়াদিল্লি।
হাক্কানি নেটওয়ার্ক একটি জঙ্গি সংগঠন। কিন্তু তার অস্তিত্ব তালিবানের (Taliban) থেকে আলাদা। তারা অনেকটাই বেশি ঘনিষ্ঠ পাকিস্তানের আইএসআই (ISI)-এর সঙ্গে। পাকিস্তানের (Pakistan) উত্তর ওয়াজিরিস্তানে তাদের দুর্গ গড়ে উঠেছে। আল কায়দার সঙ্গেও হাক্কানিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। তালিবানের হয়ে আফগানিস্তানে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অর্থ সংগ্রহের কাজ করে হাক্কানি গোষ্ঠী। এই অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বে মূলত খলিল হাক্কানি। আমেরিকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গির তালিকায় রয়েছে তাঁর নাম। মাথার দাম ৩৫ কোটি টাকা। কাবুলের পুল-এ-খিশতি মসজিদে শনিবার দেখা গিয়েছে খলিলকে। সেখানে লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। মার্কিন অ্যাডমিরাল মাইক মুলেন ২০১১ সালে হাক্কানি নেটওয়ার্ককে আইএসআই-এর ‘সত্যিকারের বাহু’ হিসাবে মন্তব্য করেছিলেন। সেই হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানির কাকা খলিল। মনে করা হচ্ছে, নয়া আফগান সরকারে ভাইপোর জায়গা পোক্ত করতে এবং ক্ষমতার অলিন্দের হিসেব-নিকেশ করতেই খলিলের কাবুলে আগমন।
সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কয়েকটি ভয়ংকর জঙ্গি হামলার পিছনে হাক্কানি নেটওয়ার্কের হাত রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। সোভিয়েত-বিরোধী জেহাদে আশির দশকে সামনের সারিতে জায়গা করে নেন জালালউদ্দিন হাক্কানি। যদিও তিনি ছিলেন মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র সম্পদ। আর তাঁর কাছে অর্থ ও অস্ত্র পৌঁছত পাকিস্তানের মাধ্যমে। তখন থেকেই আইএসআই-এর সঙ্গে হাক্কানিদের সখ্য অত্যন্ত গভীর। তবে সোভিয়েত শক্তি চলে যাওয়ার পর আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন জালালউদ্দিন। নয়ের দশকে তালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এলে তাদের সঙ্গেও তিনি হাত মেলান। মন্ত্রীও হয়েছিলেন। তালিবান আমলেও নিষ্ঠুরতা, অর্থ ও পেশিশক্তির জোরে কার্যত স্বায়ত্তশাসন চালাত হাক্কানিরা।
জালালউদ্দিনের দুই ছেলে সিরাজউদ্দিন ও আনাসকে নিয়ে বহুদিন ধরেই সন্ত্রস্ত পূর্ববর্তী আফগান সরকার ও মার্কিন প্রশাসনও। ২০১৩-র অক্টোবরে হাক্কানিদের একটি ট্রাক থেকে ২৮ টন (৬১,৫০০ পাউন্ড) বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছিল। বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, বিদেশি দূতাবাসে আক্রমণ চালাতে তারা সিদ্ধহস্ত। মার্কিন হেফাজত থেকে আনাসের মুক্তির পরেই আমেরিকার সঙ্গে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে তালিবানের সরাসরি আলোচনা শুরু হয়েছিল। এমনকী, গত বছর নিউ ইয়র্ক টাইমসে তালিবানের ভূমিকা নিয়ে উত্তর-সম্পাদকীয়ও লিখেছিলেন সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। সুতরাং তালিবানের কাছে, তাদের সংগঠনের অন্দরে হাক্কানি নেটওয়ার্কের গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়।
এই পরিস্থিতিতে তালিবান সরকার গঠনে সিরাজউদ্দিন হাক্কানি কতটা গুরুত্ব পান, তার উপর ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেকটা নির্ভর করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁর কাঁধে বন্দুক রেখে আফগানিস্তানের মাটিতে জঙ্গি ঘাঁটি তৈরি থেকে শুরু করে ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী (Terrorism) তৎপরতা বৃদ্ধি, জটিল ও ভয়ংকর হামলায় প্রযুক্তিগত সাহায্যের মতো বিষয়েও হাক্কানি নেটওয়ার্ককে কাজে লাগাতে পারবে আইএসআই। সেক্ষেত্রে ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মাথাব্যথা বহুগুণ বাড়বে।
এক নজরে হাক্কানি নেটওয়ার্ক:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.