Advertisement
Advertisement

গিলগিট-বাল্টিস্তান ভারতেরই অঙ্গ, মোদির দাবিতে সিলমোহর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের

১৯৪৭ থেকে ওই বিরোধপূর্ণ অঞ্চল 'অবৈধ' ভাবে দখল করে রেখেছে পাকিস্তান, মন্তব্য ব্রিটেনের আইনসভার।

Gilgit-Baltistan part of India: British Parliament
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 27, 2017 3:29 am
  • Updated:December 26, 2019 5:05 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুখের হাসি চওড়া হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। একইসঙ্গে পাকিস্তান ও চিনের স্বপ্ন জোর ধাক্কা খেল। গিলগিট-বাল্টিস্তানকে পাকিস্তানের পঞ্চম প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করতে চেয়েছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু ওই এলাকা ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব পাশ হল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। ১৯৪৭ থেকে ওই বিরোধপূর্ণ অঞ্চল ‘অবৈধ’ ভাবে দখল করে রেখেছে পাকিস্তান, মন্তব্য ব্রিটেনের আইনসভার।

[পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত-মার্কিন মহাজোট চান বালুচ নেতারা]

আন্তর্জাতিক মহলের এই সমালোচনায় বেজায় বিপাকে চিন। গিলগিট-বাল্টিস্তান হয়ে যে ইকোনমিক করিডর তৈরি করছে চিন ও পাকিস্তান, তাকেও ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ব্রিটেন। গত ২৩ মার্চ প্রস্তাবটি আইনসভার সামনে পেশ করেন কনজারভেটিভ নেতা বব ব্ল্যাকম্যান। তিনি জানান, বিতর্কিত ওই এলাকাকে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে পাকিস্তান।

Advertisement

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ গিলগিট-বাল্টিস্তান। ১৯৪৭ থেকে ওই এলাকা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে পাকিস্তান। ওই প্রদেশের সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে প্রতিদিন।” ওই প্রস্তাবে এও বলা হয়েছে যে, ওই বিরোধপূর্ণ এলাকায় বলপূর্বক ও বেআইনিভাবে চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর(সিপিইসি) তৈরি করা হচ্ছে।

যদিও চিন এই বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। চিনা বিদেশমন্ত্রকের এক প্রতিনিধি ইসলামাবাদের সঙ্গে সিপিইসি নিয়ে কথা বলতে পাকিস্তান রওনা হয়েছেন। প্রস্তাবিত ৫১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওই প্রকল্প বালুচিস্তানের গদর বন্দরের সঙ্গে চিনের পশ্চিমে অবস্থিত জিনজিয়াং প্রদেশকে যুক্ত করবে।

পাক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ নীতি সংক্রান্ত উপদেষ্টা সরতাজ আজিজের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তান অঞ্চলকে পাকিস্তানের পঞ্চম প্রদেশের মর্যাদা দেওয়ার সুপারিশ করে। পাক সরকার সেই লক্ষ্যে এগোতেও শুরু করেছে। কিন্তু ভারত গিলগিট-বালতিস্তানের উপর নিজেদের দাবি ছাড়েনি। ওই অঞ্চল যে ভারতের জম্মু-কাশ্মীর প্রদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা এবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টও মেনে নিল।

উল্লেখ্য, একদা অবিভক্ত জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ ছিল এই অঞ্চল। বর্তমানে তা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অংশ। এই অঞ্চলটিকে পাকিস্তানের ‘পঞ্চম প্রদেশ’ বানানোর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সরব হন কাশ্মীরের হুরিয়ত নেতারাও। প্রতিবাদ জানায় জেকেএলএফ। পাকিস্তানের ওই উদ্যোগের বিরোধিতা করেন হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি। এই উদ্যোগকে কাশ্মীরের প্রতি পাকিস্তানের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলেও তোপ দাগেন গিলানি। তাঁর দাবি, গিলগিট-বাল্টিস্তানকে অঙ্গীভূত করার কোনও ‘নৈতিক অধিকার’ পাকিস্তানের নেই। নেই কোনও ‘সাংবিধানিক বৈধতা’ও। জম্মু ও কাশ্মীরের ‘অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ’কে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার সিদ্ধান্ত কাশ্মীর সংক্রান্ত ‘রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবে’র পরিপন্থী। এমনটা করা হলে কাশ্মীরের চরিত্র ক্ষুন্ন হবে।

তবে গতবছর আস্তিনের তোলা থেকে চূড়ান্ত তাসটি খেলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চে পাক অধিকৃত কাশ্মীর, গিলগিট-বাল্টিস্তান এবং বালুচিস্তানে পাক সরকার যে ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে এবং অত্যাচার চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সে দিনের ভাষণে মুখ খুলেছিলেন মোদি। বালুচিস্তান, গিলগিট এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিদেশমন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

[সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে রাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তানকে তুলোধোনা করল ভারত]

স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদি বলেন, ”গত কয়েক দিন ধরে বালুচিস্তান, গিলগিট এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর যে বার্তা আমরা দিয়েছি, তার জন্য বালুচিস্তান, গিলগিট এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। যে মানুষদের সঙ্গে আমার কোনও দিন আলাপ হয়নি, যাঁরা অনেক দূরে থাকেন, তাঁরা যে ভাবে পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ভারতের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাতে বালুচিস্তান, পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং গিলগিটের মানুষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।” বালুচিস্তান, পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং গিলগিট-বাল্টিস্তানে অমানবিক অত্যাচার এবং মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন যে ভাবে হচ্ছে, পাকিস্তানকে এ বার আন্তর্জাতিক মহলের সামনে তার জবাবদিহি করতে হবে বলেও মোদি মন্তব্য করেন। ওই মঞ্চেই একাধিকবার ইঙ্গিত দেন, পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ প্রদেশগুলিকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ করবে নয়াদিল্লি।

কিন্তু অতি সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। ভারত কিন্তু আগাগোড়া চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরের বিরোধী। গিলগিট-বাল্টিস্তানের মধ্যে দিয়ে ওই করিডর তৈরি হওয়ায় ভারতের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত নেমে আসবে বলে সরব হয় কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক। এবার ব্রিটেনও ওই প্রকল্পকে অবৈধ দখলদারি বলে আখ্যা দেওয়ায় ভারতের সুবিধা হল। নিরাপত্তা পরিষদের এক স্থায়ী সদস্য দেশকে পাশে পেয়ে এবার সিপিইসি প্রকল্পকে ভেস্তে দেওয়ার পরিকল্পনায় নয়াদিল্লি আরও একধাপ এগিয়ে গেল বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

[হত্যা-মন্দির ভাঙায় অভিযুক্ত তিতুমীর, বিতর্কে রাজ্যের পাঠ্যপুস্তক]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement