ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: হাতে-কলমে পরীক্ষা বন্ধ। বিশ্বজোড়া করোনা আতঙ্কে এখন সবাই মেনে চলছেসোশাল ডিসট্যান্সিংয়ের ফর্মুলা। ক্লাস শিকেয় তুলে আপাতত তাই ঘরে বসেই থিয়োরি পরীক্ষা চলছে গগনযানের চার পাইলটের। বায়ুসেনার যে চার পাইলটকে নির্বাচন করে এ দেশ থেকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল, সেইতাঁরই। তাঁরা প্রত্যেকে সুস্থ আছেন। কিন্তু এখন প্রত্যেকে নিজেদের গৃহবন্দি করে রেখেছেন। আলাদা আলাদা ঘরে থেকেই চলছে তাঁদের প্রস্তুতি। নতুন মাসে রাশিয়ার পরিস্থিতি বিচার করে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে এক ই-মেল বার্তার জবাবে জানিয়েছে গ্ল্যাভকসমস। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র রসকসমসের সহকারী সংস্থা এটি। এই সংস্থার অধীনেই প্রস্তুতিপর্ব চলছে ভারতীয় বায়ুসেনার চার পাইলটের।
২০২২-এর মধ্যে গগনযান মিশনের লক্ষমাত্রা নেয় ইসরো। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মহাকাশযানে নির্বাচিত ক’জন মহাকাশচারীকে পাঠানো হবে পৃথিবীর কক্ষপথে। সাতদিন পৃথিবীর কক্ষে থেকে তাকে প্রদক্ষিণ করবে যানটি। মহাকাশের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলবে ওই কক্ষপথ থেকেই। প্রাথমিকভাবে তার সময়সীমা ধরা হয়েছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস। আর উড়ান থেকে শুরু করে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসার গোটা প্রক্রিয়া পরীক্ষামূলকভাবে পরখ করতে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই মানববিহীনভাবে যানটিকে মহাকাশে পাঠানোর কথা ছিল। তার জন্য সবরকম পরীক্ষানিরীক্ষার প্রায় সিংহভাগই সেরে ফেলেছিল ইসরো। যদিও চেয়ারম্যান কে সিভান জানিয়েছিলেন মানববিহীন যানটিকে দু’বার পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গোটা মিশনটাই পিছিয়ে যায় এক বছর করে। অর্থাৎ ২০২০-র বদলে ২০২১-এ মানববিহীন যান পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে হবে মূল উড়ান।
ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটদের মধ্যে থেকে তুখোড় সাতজনকে রাশিয়া পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে চারজনকে বাছাই করে তাঁদের নভোশ্চর হিসাবে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারি থেকে। যদিও লকডাউন পরবর্তী সময়ে প্রশিক্ষণরত বায়ুসেনার সেই পাইলটরা কেমন আছেন, তা তারা জানাতে চায়নি। ই-মেল বার্তার কোনও জবাব দেয়নি। জবাব দেয় গ্ল্যাভকসমস।
সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে মহামারীর পরিস্থিতি বিবেচনা করে মার্চ মাসের শেষ থেকেই লকডাউনের সমর্থনে পৃথক প্যানডেমিক রেসপন্স গ্রুপ তৈরি করে দেয় গ্ল্যাভকসমস। এ প্রসঙ্গে সংস্থার প্রেস সচিব এভগেনি কোলোমিটস তাঁদের ডিরেক্টর জেনারেল ডিমিত্রি লোসকুটোভের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। লোসকুটোভ জানিয়েছেন, “ইসরো ভারতীয় বায়ুসেনার যে চার পাইলটকে পাঠিয়েছিল, তাঁরা প্রত্যেকে সুস্থ রয়েছেন। আপাতত প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস হচ্ছে না। তবে প্রশিক্ষণ চলছে। থিয়োরি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক সপ্তাহে তাঁরা চমৎকার পরীক্ষা দিচ্ছেন। মূল প্রশিক্ষণের ২৫ শতাংশ তাঁরা রপ্ত করে ফেলেছেন।”
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে একেকটি বিষয়ের উপর পরীক্ষা চলছে। প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে রাশিয়ার মানবযানের অনবোর্ড সিস্টেমের উপর। পরের সপ্তাহে পরীক্ষা হয়েছে উড়ান সম্পর্কিত নানা বিষয়ের উপর। গোটা পর্বে জলের তলায়, শূন্যে নানা শারীরিক পরীক্ষা হওয়ার কথা। রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত সয়ূয যান মডিউলের পরিকাঠামোকে সামনে রেখে প্রশিক্ষণের গোটা প্রক্রিয়াটা চলছে। মাথায় রাখতে হবে মহাকাশে শরীরের ওজন হয় পালকের মতো হালকা। সেই অবস্থায় শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসতে গিয়ে অনিয়ন্ত্রিত ল্যান্ডিং সামলানোর প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে ওই পাইলটদের। ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটদের এই প্রশিক্ষণের জন্য ২০১৯-এ রাশিয়ার এই সংস্থার সঙ্গে ইসরো চুক্তিবদ্ধ হয়। রাশিয়ার গ্যাগারিন রিসার্চ অ্যান্ড টেস্ট কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারে চলছে এই প্রশিক্ষণ।
গ্ল্যাভকসমস জানাচ্ছে, এই প্রশিক্ষণপর্ব চলাকালীনই করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করে বিশ্বজুড়ে। মার্চের শেষেই লকডাউনের আওতায় চলে যায় তারা। গোটা এপ্রিল মাস একই অবস্থা থাকবে। পরবর্তীকালে পরিস্থিতি বিচার করে তবেই নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে প্রশিক্ষণপর্ব চলবে এই চার পাইলটের। শুধু এই চার পাইলটেরই নয়, সংস্থার নিজস্ব কর্মী, গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একই নিয়ম মানা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন লোসকুটোভ। এর আগে ১৯৮৪ সালে প্রথম ভারতীয় হিসাবে বায়ুসেনার পাইলট রাকেশ শর্মা মহাকাশে পাড়ি দেন। সেই অভিযান ছিল রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে। তারও সময়সীমা ছিল সাতদিনের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.