ফাইল ফটো
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নোভেল করোনা ভাইরাসের কোপে পড়তে চলেছে গোটা দেশটাই। মৃত্যুভয় জাঁকিয়ে বসেছে গোটা ফ্রান্সে। মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪৮। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৩০০ জন। একদিনেই মারা গিয়েছেন ২১ জন। লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মানদের হামলার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে করোনার হামলাকে। নজিরবিহীন জাতীয় সংকট ও যুদ্ধ পরিস্থিতি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে মারণ ভাইরাসের দাপটকে। প্রতিবেশী ইটালি এখন মৃত্যু উপত্যকা। করোনার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে ইতালি। ব্রিটেনেও ছড়িয়েছে করোনা। ইতালি থেকেই ট্রেন, বিমান ও বাস যাত্রীদের মাধ্যমে বা পণ্য বোঝাই ট্রাকের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়েছে ফ্রান্স। এমনটাই মনে করছেন ফরাসিরা। তাই গোটা ফ্রান্সকেই ‘লকডাউন’ ঘোষণা করল প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরোঁর সরকার। সংক্রমণের জেরে ইউরোপের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হল ফ্রান্সকে। প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ। আপাতত ৩০ দিন নাগরিকদের ‘গৃহবন্দি’ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা আক্রান্ত ২১ জনের মৃত্যু এবং ১২০০ জনেরও বেশি নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার পরেই তড়িঘড়ি এই ঘোষণা করা হয়েছে।
নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরনো যাবে না। নিয়ম ভাঙলে জরিমানা বা গ্রেফতারির হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্টের ঘোষণায়। ফ্রান্সে ভয়াবহ গতিতে ছড়াচ্ছে করোনা প্রকোপ। দেশে এখনও পর্যন্ত ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত ৬৬৩৩ জন। রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন ১২১০ জন। এর মধ্যে অবশ্য চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১২ জন। সংক্রমণ রুখতে আগে থেকেই স্কুল-কলেজ, সিনেমা হল, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, পানশালা সব বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু যে ভাবে ঝড়ের গতিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে, তা উদ্বেগজনক। ইটালির ভয়াবহ অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি ফরাসি প্রশাসন। জাতির উদ্দেশে ২২ মিনিটের ভাষণে মাকরোঁ বলেন, ‘‘অত্যন্ত কঠোর ভাবে দেশ জুড়ে ১৫ দিনের জন্য নাগরিকদের চলাফেরায় সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হচ্ছে। না মানলে দৃষ্টান্তমূলক সাস্তি, জরিমানা করা হবে। সামাজিক বা পারিবারিক জমায়েতও নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র জরুরি জিনিসপত্র কেনাকাটা, ওষুধ কেনা বা হাসপাতালে যাওয়া, কর্মক্ষেত্রে যাওয়া আসা ছাড়া বাইরে বেরনো যাবে না।’’
ফরাসি প্রেসিডেন্টের পরে সেখানকার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ক্রিস্টোফি কাসনার বলেন, বাইরে বেরোলে সেটা যে জরুরি প্রয়োজনে, তা প্রমাণ করার জন্য অবশ্যই নথি রাখতে হবে না হলে পুলিশ গ্রেফতার করে আইসোলেশনে পাঠাতে পারে। এ ছাড়া এই নয়া নিয়ম কার্যকর করার জন্য ১ লক্ষ নিরাপত্তা কর্মী রাস্তায় মোতায়েন করা হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সমস্ত সীমান্ত কার্যত সিল করে দেওয়া হয়েছে। ৩০ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে ফ্রান্সের সব সীমান্ত। অন্যদিকে, করোনা ভাইরাসের আক্রমণ বোধহয় চিনের চেয়েও মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করতে চলেছে ইটালিকে। মৃত্যুর হার হিসেব করলে তো চিনকেও ছাপিয়ে গিয়েছে ইটালি। সরকারি সূত্রের খবর, প্রতিদিন একের পর এক বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। কিন্তু সেই অনুযায়ী মর্গগুলোতে দেহ রাখার জায়গা নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.