সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইরাকের উদ্বাস্তু তাঁবুতে এক-একটা রাত কেটেছে আতঙ্কে৷ তাঁবুর বাইরে থেকে আইএসআইএস জঙ্গিদের পায়ের শব্দ ভেসে আসত৷ এই বুঝি কোনও এক জঙ্গি এসে তাঁকে ফের ধর্ষণ করে৷ আতঙ্ক এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে ইজ্জত বাঁচাতে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মেয়ে ইয়াসমিন৷ গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন৷ যাতে জঙ্গিরা আর তাঁকে ‘আকর্ষণীয়’ না মনে করে৷ মুখ, চুল, নাক, কান পুড়ে যায়৷ গত বছর এই অবস্থাতেই তাঁকে তাঁবু থেকে উদ্ধার করেছিলেন জার্মান চিকিৎসক জ্যান ইলহান কিজিলহান৷
সেসব আতঙ্কের দিন এখন অতীত৷ ইয়াসমিন এখন পরিবারের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন৷ বাকি ১,১০০ জন মহিলা দলের সঙ্গে আইএস-এর ডেরা থেকে তিনিও পালিয়ে আসতে সফল হয়েছিলেন৷ মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে জার্মানিতে এখন চিকিৎসা চলছে ১৮ বছরের ইয়াসমিনের৷ সেই আগের ইয়াসমিন হয়ে উঠতে চান তিনি৷
গত বছর এই সময়ই উত্তর ইরাকের সিঞ্জার প্রদেশ থেকে ইয়াজিদিদের কবজা করেছিল আইএস৷ এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিশুদের আইএস-এ যোগ দিতে বাধ্য করা হয়৷ পুরুষদের বাধ্য করা হয় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে৷ রাজি না হলে তাঁদের মেরে ফেলত জঙ্গিরা৷ এবং মহিলাদের যৌনদাসীতে পরিণত করা হয়েছিল৷ ইয়াসমিনও তাঁদেরই মধ্যে একজন৷ সেই সময় আইএস-এর খপ্পর থেকে বহু মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় দিয়েছিল জার্মানি৷
ইয়াসমিনের মতো উদ্ধার হওয়া মহিলাদের সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন চিকিৎসক জ্যান ইলহান কিজিলহান৷ আইএস-এর যৌনদাসীতে পরিণত হওয়া মহিলারা তাঁদের কথা জানিয়েছেন কিজিলহানকে৷ তিনি বলছেন, “জীবনে এমন অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি৷ ভাবুন, আপনার সামনে একটা ৮ বছরের শিশু বসে বলছে তাকে আইএস আটবার বিক্রি করেছিল আর ১০ মাসে ১০০ বার ধর্ষণ করেছে৷ শুনে কেমন লাগবে আপনার!”
গায়ে আগুন লাগানোর মতো এমন কঠিন সিদ্ধান্ত কীভাবে নিয়েছিলেন ইয়াসমিন? কিজিলহানের এমন প্রশ্নের উত্তরে ইয়াসমিন জানান, “ওদের শব্দ আমার কানে বাজত৷ সবসময় ভয় করত৷ আর পারছিলাম না৷ সেই জন্যই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলি৷ আমাদের সঙ্গে কী হয়েছিল, তা গোটা বিশ্বের জানা উচিত৷ যাতে আর কাউকে এমন অবস্থায় না পড়তে হয়৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.