সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বালাকোটের মতো ফের হামলা চালাতে পারে ভারতীয় বিমানবাহিনী। অথবা ভারতের সেনা কমান্ডোরা ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাতে পারে। এই রকমই আশঙ্কা করছিলেন পাক গোয়েন্দারা। কারণ যতবার সরকারিভাবে পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে ভারতের কাছে আলোচনার প্রস্তাব পাঠাচ্ছে ততবারই ভারত সাফ জানিয়েছে, আগে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করুক পাকিস্তান। ভারতের মাটিতে সন্ত্রাস রফতানি বন্ধ করুক, না হলে কোনও আলোচনা নয়।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল আন্তর্জাতিক চাপও। ফলে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জেহাদিদের ঘঁটিগুলি ধ্বংস করতে ভারত যে কোনও সময় অভিযান চালাবে এমন আশঙ্কাই জোরদার হচ্ছিল। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রায় সব জঙ্গি ঘাঁটি বন্ধ করে দিল পাকিস্তান। গত দু’মাস ধরে এই বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলেছে। ভারতীয় গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি রিপোর্টও পাঠিয়েছেন নয়াদিল্লির সদর দপ্তরে। পুলওয়ামা কাণ্ডের চার মাস পর গোয়েন্দা সূত্রে জঙ্গি ঘাঁটি বন্ধ হওয়া নিয়ে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার পর দিল্লিতে পাক হাইকমিশনারের হাতে বেশ কিছু নথিপত্র তুলে দেয় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। তাতে হামলায় জইশ যোগের প্রমাণ-সহ সে দেশে গড়ে ওঠা জঙ্গি শিবিরগুলি নিয়ে সবিস্তার তথ্য ছিল। তারপরই ইমরান খান সরকারের তরফে পদক্ষেপ করা হয় বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
পাক হাইকমিশনারকে যে নথিপত্র দেওয়া হয়েছিল, তাতে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ১১টি জঙ্গি শিবিরের উল্লেখ ছিল। যার মধ্যে মুজফ্ফরাবাদ ও কোটলি ক্লাস্টারে পাঁচটি করে এবং বার্নালায় একটি জঙ্গি শিবির ছিল। কোটলি এবং নিকিয়াল এলাকায় যে জঙ্গি শিবিরগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি চালাত লস্কর-ই-তইবা। পালা এবং বাগ এলাকায় বন্ধ হওয়া শিবিরগুলির বেশিরভাগই আবার জইশ-ই-মহম্মদ চালাত। কোটলি এলাকায় হিজবুল মুজাহিদিনেরও একটি শিবির ছিল। বর্তমানে মুজফ্ফরাবাদ এবং মীরপুরের কাছে লস্কর, জইশ এবং হিজবুলের যে জঙ্গি শিবিরগুলি ছিল সেগুলি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দারা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।
এছাড়া ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় প্যারাট্রুপার কমান্ডোরা পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের যে যে সেক্টরগুলিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল। সেই জায়গাগুলিতে গজিয়ে ওঠা স্থায়ী ও অস্থায়ী জঙ্গি ঘাঁটিগুলিও আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে পাক সেনা। কিন্তু, বন্ধ রাখার বিষয়টি সামগ্রিকভাবে কতটা সাময়িক এবং কতটা পাকাপাকি তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। কারণ ভারতের হামলার আশঙ্কা এবং আন্তর্জাতিক চাপের জেরে জঙ্গি ঘাঁটিগুলি এখন হয়তো বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে সেগুলি পাক সেনা এবং পাক গোয়েন্দাদের নির্দেশে চালু হতে পারে। তাই গোয়েন্দা রিপোর্ট হাতে পেয়ে পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে নয়াদিল্লি।
পুলওয়ামা, বালাকোটের ঘটনার পর সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। তার জেরে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তায় জোর দেয় দু’দেশই। জঙ্গি অনুপ্রবেশ রুখতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে ভারতীয় সেনা। সেই থেকে গত দু’মাসে এখনও পর্যন্ত পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে কোনও অনুপ্রবেশের ঘটনা চোখে পড়েনি। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের ডাক দিয়েছে পাকিস্তান। এই অবস্থায় জঙ্গি ঘাঁটি বন্ধ করাটা সদর্থক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছে নয়াদিল্লি।
সোমবার এই রিপোর্টের কথা প্রকাশ্যে আসার পরই ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, “পাকিস্তান জঙ্গিঘাঁটিগুলি বন্ধ করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখার কোনও উপায় নেই। তবে ওপার থেকে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ বন্ধ হলেই বুঝতে পারব যে বিষয়টি সত্যি। আর শুধু জঙ্গিঘাঁটি বন্ধ করলেই হবে না, জঙ্গিদের সবরকম সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ করতে হবে পাকিস্তানকে। তবে ওরা যাই করুক সীমান্তে কড়া নজরদারি চালানোর বিষয়ে কোনও সমঝোতা করা হচ্ছে না।”
Army Chief General Bipin Rawat: We will wait to see the results on ground which will become evident in case there is major drop in infiltration into our territory, and there are curbs to prevent physical and financial support to terrorists. https://t.co/njQIbJboOg
— ANI (@ANI) June 10, 2019
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.