সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আদরের মেয়ের গায়ে যাতে এতটুকু আঁচও না লাগে, তার জন্য সর্বক্ষণ সজাগ থাকেন অভিভাবকরা। আর কিশোরী কন্যা যদি জনপ্রিয় হয়ে যায়, তাহলে বোধহয় চিন্তা আরও বাড়ে। যেমনটা এখন অনুভব করছেন কিশোরী পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের বাবা সোয়ান্তে, যিনি নিজে একজন অভিনেতা-লেখক। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা নিয়ে রাষ্ট্রনায়কদের চোখ খুলে দেওয়ায় রাতারাতিই প্রায় বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে ১৬ বছরের সুইডিশ মেয়েটি। আর তাতে চিন্তা বেড়েছে বাবার। সম্প্রতি এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সোয়ান্তে খোলাখুলিই বললেন, ”ওর জীবন নিয়ে ও খুব খুশি। কিন্তু আমি চিন্তিত। স্কুলে না গিয়ে দিনের পর দিন পরিবেশ রক্ষা নিয়ে বিক্ষোভ, ধর্মঘট করা ওর পক্ষে বিপজ্জনক।”
তবে এত বছর ধরে তাবড় লোকজন যা করার চেষ্টা করেছেন, কিছুতেই সফল হতে পারছিলেন না, গ্রেটার বয়সে সেই সাফল্যের জন্য মেয়ের বাবার গর্বও কোনও অংশে কম নয়। তাও তিনি গোপন রাখেননি। তবে গ্রেটা নিজে এই জীবনযাপন নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি খুশি বলেও জানিয়েছেন বাবা সোয়ান্তে। আসলে তাঁর চিন্তা অন্য জায়গায। পরিবেশ সম্পর্কে সকলকে সচেতন করে গ্রেটা থুনবার্গ যত জনপ্রিয় হয়েছে, ঠিক ততই তার নিন্দেমন্দ করার লোকও বেড়েছে। অনেকেই গ্রেটাকে ‘জেদি’, ‘উশৃঙ্খল’ বলে মনে করেন। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ঘুরিয়ে গ্রেটার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর এইসব বাবাকে বেশ চিন্তায় ফেলছে।
সুইডিশ কিশোরী তথা পরিবেশকর্মীর হাত ধরে স্কুলপড়ুয়াদের বিক্ষোভের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বেই। স্কুলের পোশাকেই হাতে পোস্টার, ব্যানার নিয়ে পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে নেমে পড়েছে শয়ে শয়ে পড়ুয়া। সুইডেন-সহ আশেপাশের একাধিক জায়গায় এই ছবি এখন পরিচিত। কিন্তু যে মেয়েটি হাজার হাজার কিশোর-কিশোরীর অনুপ্রেরণা, সে কিন্তু একটা সময়ে লড়াই করেছে মানসিক অবসাদের সঙ্গে। বাবা সোয়ান্তে সাক্ষাৎকারে জানালেন, ”গত তিন-চার বছর খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছে গ্রেটা। পরিবেশ সংক্রান্ত চিন্তা ওকে এতটাই গ্রাস করেছিল যে নাওয়াখাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল প্রায়। স্কুলে যেত না, কারও সঙ্গে কথা বলত না। সন্তানের এমন অবস্থা যে কোনও বাবা-মায়ের কাছে দুঃস্বপ্ন। ওকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর জন্য আমি অনেকটা সময় দিতাম ওকে। ওর মা নিজের সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছিলেন, যাতে সকলে একসঙ্গে থাকতে পারি।” গ্রেটার মা এম্মা থুনবার্গ পেশার একজন অপেরা গায়িকা। মেয়ের পাশে থাকতে তিনি মাঝপথে কেরিয়ারে ইতি টানতেও ভোলেননি।
সেই পর্ব পেরিয়ে গ্রেটা এখন বিশ্বের সর্বালোচিত ৫ জনের মধ্যে একজন। ধীরে ধীরে পালটেছে তার জীবনযাত্রার ধরনও। আমিষ খাওয়া ছেড়ে নিরামিষাশী হয়েছে। গাড়ি চড়া ছেড়ে দিয়েছে। সুইডেন থেকে নিউ ইয়র্ক হয়ে স্পেন – গোটা যাত্রাপথ একটামাত্র কায়াক নিয়ে ঘুরেছে। সোয়ান্তে বলছেন, ”এখন ও আমাদের প্রশ্ন করে। বলে, কোন মানবাধিকারের জন্য তোমরা লড়ছো? পরিবেশ বদলের বিপদ সম্পর্কে সচেতন হও এখনই।” তার লড়াইয়ে এখন শামিল বাবা সোয়ান্তেও। কিন্তু তাঁর কথায়, ”আমি ওর সঙ্গে আছি, পরিবেশ বাঁচানোর স্বার্থে নয়। নিজের মেয়ের ভালর জন্যই এসব করছি।” উদ্বেগ চেপে রেখেই মেয়ের আনন্দে গা ভাসিয়েছেন সোয়ান্তে থুনবার্গ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.