সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস। ফলের খোসা, প্লাস্টিকের বোতল, এমনকী অন্তর্বাস দিয়েও ফেসমাস্ক বানিয়ে পরতে দেখা যায় ইউহান প্রদেশের বাসিন্দাদের। হ্যা, চিনের এই অঞ্চলই করোনা ভাইরাসের উৎস। মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচতে সে সময় মাস্ক, গ্লাভস চেয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয় কমিউনিস্ট দেশটি। কিন্তু তারপরই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পালটে যায়। মাস তিনেকের মধ্যেই নিজের দেশে জোগান দিয়েও মাস্ক রপ্তানি শুরু করে চিন। আচমকা উৎপাদনের এই বিপুল হারে বৃদ্ধিতে প্রশ্নও উঠে আসে একাধিক। এবার সেই রহস্যের সমাধান হয়েছে। জানা গিয়েছে, বন্দি শিবিরগুলিতে মাস্ক তৈরি করতে উইঘুর মুসলিমদের ‘গোলাম বাহিনী’কে কাজে লাগিয়েছে চিন।
সম্প্রতি এই মর্মে The Guardian পত্রিকায় একটি চাঞ্চল্যকর প্রবন্ধ পপ্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বন্দি উইঘুরদের দিয়ে জোর করে তৈরি করানো ফেসমাস্ক অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি করেছে বেজিং। চিনের হুবেই প্রদেশে প্রোটেক্টিভে পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থা Hubei Haixin Protective Products Group Co Ltd অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ২ লক্ষ মাস্ক রপ্তানি করেছে। অভিযোগ, সেই মাস্কগুলি জোর করে উইঘুর শ্রমিকদের দিয়ে তৈরি করানো হয়েছে। Australian Strategic Policy Institute নামের একটি সংস্থা সম্প্রতি দাবি করেছে, চিনা ফ্যাক্টরিগুলিতে প্রায় ৮০ হাজার উইঘুর মজদুরদের জোর করে কাজ করানো হচ্ছে। ২০১৭ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে ওই শ্রমিকদের নিজের বাড়ি বা ডিটেনশন সেন্টার থেকে নিয়ে এসে চিনের সুদূর প্রান্তে কাজে লাগানো হয়েছে। কেউ কাজ করতে রাজি না হলে চরম নির্যাতন চালানো হচ্ছে তাঁদের উপর। এই খবর প্রকাশ্যে আসতে তুমুল চঞ্চল্য ছড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের অনেকেই সাফ বলেছেন, চিন থেকে ফেসমাস্ক আমদানি করলে সেগুলি তৈরির স্বচ্ছতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। কোনও চিনা সংস্থার উপর জোর করে মজদুরি করানোর অভিযোগ থাকলে সেগুলি থেকে যেন কোনও পণ্য কেনা না হয়। প্রসঙ্গত, করোনা মহামারীর আবহে অস্ট্রেলিয়ায় মাস্ক ববহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে সে দেশে লাগাতার বাড়ছে চাহিদা। তাই বর্তমানে চিনের কাছে লোভনীয় বাজার হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া।
উল্লেখ্য, পশ্চিম চিনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর (Uighur) মুসলিমদের উপর গত এক দশক ধরে অবর্ণনীয় অত্যাচার চালাচ্ছে চিন সরকার। চিনের সেনা (PLA) ও পুলিশ উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার এবং ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্যটুকু কেড়ে নিয়েছে। ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারটুকুও নেই। এর বিরুদ্ধে চলতি মাসের শুরু দিকেই আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে চিনের (China) বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রবাসী উইঘুর মুসলিমদের দু’টি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সম্প্রতি, আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ একাধিক দেশ উইঘুরদের নিপীড়ন নিয়ে সরব হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই চিনা সরকারের নীতি যে বদলানোর নয়, তা স্পষ্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.