সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহামারি থেকে রক্ষা পেতে লকডাউনই একমাত্র রাস্তা। সে প্রথম বিশ্বের রাষ্ট্রই হোক অথবা পিছিয়ে পড়া দেশ, সব্বার জন্য এক দাওয়াই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO)। সেই পথে হেঁটেও অনেকে রোগ সংক্রমণ সামাল দিতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমীভাবে লকডাউনের পথেই হাঁটছে না আলফ্রেড নোবেলের দেশ। সুইডেনে এখনও কোনও লকডাউন নেই। স্কুল-কলেজ খোলা, রেস্তরাঁ-পাব চলছে দিব্যি। সরকার ১০০ শতাংশ ভরসা রেখেছে দেশবাসীর সচেতন, সতর্ক মানসিকতার উপর। প্রশাসনের দৃঢ় বিশ্বাস, দেশবাসী নিজেরাই সতর্ক হয়ে নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাবে। আর নজরকাড়া বিষয় হল এই যে, সত্যিই সুইডেনে এই মুহূর্তে সব খোলা থাকলেও, ৫০ জনের বেশি একসঙ্গে কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
স্ট্র্যাটেজি একটাই – কোনও লকডাউন ঘোষণা নয়, দেশবাসীর উপর অগাধ ভরসা রাখতে হবে। তাঁরা নিজেরাই ঠিকমত নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন। অথচ COVID-19 সুইডেনের উপর ভালই কামড়
বসিয়েছে। দু’দিন আগে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ছোট্ট নরডিক দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯১০০এর বেশি, মৃত্যু হয়েছে ৭৯৩ জনের। যা যে কোনও ইউরোপীয় দেশের সমতুল্য। তবু লকডাউনের পথে হাঁটতে নারাজ সুইডিশ সরকার। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী থেকে শুরু করে মহামারি বিশেষজ্ঞ – সকলেই মনে করছেন, এই সংকটকালে সুইডেন যা পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা ভালই।
মহামারি বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডার টেগনেলের কথায়, ‘‘স্কুল-কলেজ আমরা বন্ধ করিনি ইচ্ছে করে। কারণ, জানি দৈনন্দিন জীবনে হঠাৎ ছেদ পড়লে, তা মনের উপর চাপ ফেলবে। ছোটরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। ’’ সেখানকার এক সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমেছে। কোনও গাড়িতে একসঙ্গে অনেকে যাতায়াত করছেন না। রোগ সম্পর্কে জানার পর কেউ কাউকে চুম্বন পর্যন্ত করছেন না। বয়স্করা নিজেরা ঘর থেকে বিশেষ বেরচ্ছেন না। অর্থাৎ নিত্যদিনের কাজ যেমন চলছিল, তেমনই চলছে। শুধু একটু-আধটু হেরফের।
সুইডেনের এই পদক্ষেপকে গোটা বিশ্ব মোটেই ভাল চোখে দেখছে না। অসন্তুষ্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো তীব্র শ্লেষ আর ক্ষোভের সুরেই বলেই ফেললেন – ‘‘সুইডেনকে এর মূল্য চোকাতে হবে, খুব খারাপ দিনের দিকে দেশকে ঠেলে দিচ্ছে তারা।’’ সুইডিশ বিদেশমন্ত্রী অ্যান লিন্ডের অবশ্য পালটা বক্তব্য, তাঁরা ঠিক পথেই হাঁটছেন। মানুষকে ঘরবন্দি রেখে রোগ প্রতিরোধে তারা বিশ্বাসী নয়। বরং নানা কাজের মধ্যে থেকে তাঁরা নিজেরাই রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করুক। সুইডেনের মতো সমৃদ্ধশালী দেশের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, তা তর্কের বিষয় হতেই পারে। তবে একথা না বললেই নয়, যে দেশের নাগরিকদের সচেতনতা বোধ এতটা বেশি, সেই দেশ এই সাহস দেখাতেই পারে বোধহয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.