সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আয়লান কুর্দিকে মনে আছে? গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময়ে ভূমধ্যসাগরে জাহাজডুবিতে ইটালির কাছে সমুদ্রসৈকতে দেখা গিয়েছিল বছর চারের বাচ্চাটির মৃতদেহ৷ সে ছবিতে অন্তর কেঁদে উঠেছিল আপামর বিশ্ববাসীর৷ আয়লানের মতো এমন দৃশ্য কি ফের দেখতে হবে? ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিকতম সিদ্ধান্ত সেই দুর্দিনেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷
পোশাকি নাম – অপারেশন সোফিয়া৷ মিশনের উদ্দেশ্য, বিভিন্ন কারণে নিজেদের দেশ ছেড়ে শরণার্থীর মতো জলপথে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়া মানুষজনকে সলিল সমাধি থেকে উদ্ধার করা৷ লিবিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা, সোমালিয়ার খরা কিংবা গৃহযুদ্ধে উত্তাল সিরিয়া পরিস্থিতির মতো আপৎকালীন সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এভাবেই নিজেদের মানবতা দেখিয়েছে৷ শরণার্থী বোঝাই জলযান কোনও কারণে মাঝসমুদ্রে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে, ওই এলাকা যে দেশের অন্তর্গত, সেই দেশের নৌবাহিনীর দায়িত্ব বিপন্ন মানুষজনকে উদ্ধার করা এবং সাধ্যমতো তাদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা করা৷ সেভাবেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ – জার্মানি, গ্রিস, ইটালির মতো দেশে বহু শরণার্থীর পুনর্বাসনের হয়েছে৷ অপারেশন সোফিয়ার সাফল্য এখানেই৷ কেউ বা এখনও দেশহীন হয়ে ঘুরছেন৷ আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, উদ্বাস্তু হিসেবেও যদি মাথা গোঁজার কোনও স্থায়ী ঠিকানা মেলে৷
কিন্তু এমন উদারতা দেখানোর পর শরণার্থীর চাপে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অপারেশন সোফিয়া বন্ধ করে দিতে চলেছে৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সমুদ্রপথে ডুবন্ত জাহাজ থেকে আর কোনও শরণার্থীকে উদ্ধার করবে না উপকূল রক্ষী বাহিনী৷ ইটালির অতি-ডানপন্থী সংগঠনই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সবচেয়ে বেশি তৎপর৷ কারণ, তাদের দেশেই নাকি সবচেয়ে বেশি ভিড় শরণার্থীদের৷ সেই চাপ আর নেওয়া যাচ্ছে না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ইটালি প্রশাসন৷ একা ইটালিতেই নয়, জরুরি পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের দুয়ার এতটাই খুলে দিয়েছিল, যে বিভিন্ন দেশেই শরণার্থীর চাপ বেড়েছে৷ তাতে বিভিন্ন দেশের সমস্যাও হয়েছে বিভিন্ন ধরনের৷ জার্মানি চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল যে কোনও পরিস্থিতি সাপেক্ষেই শরণার্থীদের জন্য দরজা খোলা রাখতে বদ্ধপরিকর৷ ইটালি, ফ্রান্সের তাতে নারাজ৷ ব্রিটেন ইতিমধ্যেই শরণার্থী প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে৷ এমনকী এনিয়ে অন্যান্যদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হওয়ায় ব্রিটেন আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আওতায় থাকতেই চায় না৷ ব্রেক্সিট নিয়ে লাগাতার দ্বন্দ্ব তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ৷ পোল্যান্ড, হাঙ্গেরির মতো ছোট দেশগুলি গোড়া থেকেই নিজেদের দরজা বন্ধ রেখেছে৷
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী জার্মানির মতামত খারিজ করা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব৷ তাই এতদিন অপারেশন সোফিয়ায় ইতি টানা যাচ্ছিল না৷ কিন্তু সাম্প্রতিক একাধিক পরিস্থিতি এখন শরণার্থী উদ্ধার এবং পুনর্বাসনের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে জার্মানিকেও৷ শরণার্থীদের ঠাঁই দেওয়ার পর জার্মানির সামগ্রিক পরিবেশ অনেক বদল হয়েছে৷ বিভিন্ন জনজাতির মিলমিশের ফলে প্রকৃত ঐতিহ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে তারতম্য ঘটছে৷ এমনই আরও ছোটখাট সমস্যায় পড়ছেন মর্কেল৷ ফলে খুব শিগগিরই হয়তো সেদেশও মুখ ফিরিয়ে নেবে বিপন্ন মানুষজনের থেকে৷ হয়তো সমুদ্রসৈকতে আবার পুনরাবৃত্ত হবে আয়লান কুর্দিদের প্রতিচ্ছবি৷ যা মানবতার মাথা নত করে দেবে৷ এনিয়ে নিন্দাও শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.