সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সার্থক নাম, বলছেন সকলেই। চারদিকে যখন রুশ বাহিনীর গোলা বর্ষণ, একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হানা। প্রাণ বাঁচাতে ইউক্রেনের (Ukraine) মাটি ছাড়ছে মানুষ, তখন তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে (Ukraine-Russia War) মাটি কামড়ে ভারতীয় পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করছেন। তিনি বাঙালি চিকিৎসক-অধ্যাপক ডা. পৃথ্বীরাজ ঘোষ (Dr Prithwi Raj Ghosh)।
যারা বলে বাঙালি ভিতু, সেই নিন্দুকদের ভুল প্রমাণ করছেন ৩৭ বছরের তরুণ। চিকিৎসক-অধ্যাপক বলেন, “আমি পালাতে শিখিনি, ওদের জন্য পড়ে রয়েছি।” ওরা মানে তাঁর ছাত্রছাত্রীরা। ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া অসংখ্য ভারতীয় পড়ুয়া। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা করার পর যাঁরা ভয়ানক বিপদে পড়েছেন। বেশ কিছু পড়ুয়া ইতিমধ্যে দেশে ফিরতে পারলেও এখনও অনেকেই আটকে।
আদতে কলকাতার বাসিন্দা পৃথ্বীরাজ জানান, এখনও পর্যন্ত “৩৫০ জন পড়ুয়াকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছি। এদের সিংহভাগই আমার ছাত্র-ছাত্রী৷ কিন্তু এখনও আমার অনেক পড়ুয়া আটকে রয়েছেন। তাঁদের দেশে না ফিরিয়ে আমি একা নিজের প্রাণ নিয়ে ফিরে যাব কী করে!’’
কলকাতার বাড়িতে রয়েছেন পৃথ্বীরাজের বাবা প্রদীপ ঘোষ ও মা ব্রততী ঘোষ। স্বভাবতই ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকেই উৎকন্ঠায় দু’ চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। তবু, ছেলে যে কাজ করছেন তাতে সমর্থন রয়েছে তাঁদের। প্রদীপবাবুর কথায়, “আমাদের চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ও জানে ওর কী দায়িত্ব।” সন্তানের উদারতা ও সাহসিকতায় গর্বিত বাবা-মা বলেন, “মানুষের মতো মানুষ হয়েছে ছেলে। দেখবেন, ওর কোনও ক্ষতি হবে না।”
তিনি যে নিজের ইচ্ছেতেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আটকে রয়েছেন, তা জানিয়ে দিয়েছেন পৃথ্বীরাজ। বলেন, “আমি কিয়েভে রয়েছি নিজের ইচ্ছেয়। কিয়েভ থেকে অধিকাংশ পড়ুয়াকে বের করা গেলেও এখনও এদেশের বিভিন্ন জায়গায় বহু ছেলেমেয়ে আটকে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে আমার ছাত্রছাত্রী। তাঁদের না ফিরিয়ে ইউক্রেন ছাড়তে পারি না।”
বাংলার পৃথ্বীরাজকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা দেশ। আর অকুতোভয় অধ্যাপক-চিকিৎসক বলছেন, ‘‘আমি বাঙালি। বাঙালি কখনও কাপুরুষ নয়। এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। তাই জীবনের যত ঝুঁকিই থাকুক না কেন, আমার সব ছাত্রছাত্রীদের না নিয়ে দেশে ফিরব না।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.