ফাইল ফটো
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী’-প্রায়শই এই ধরনের সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নেয়। কিন্তু কীটনাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে করোনা চিকিৎসা! এমন উদ্ভট ও অবান্তর প্রস্তাব বিশ্বে একজনই বোধহয় দিতে পারেন। হ্যা, ঠিকই ধরেছেন। ঠিক এই প্রস্তাবই দিয়েছেন আমেরিকার ‘সর্বশক্তিমান’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরেই যথারীতি তাঁকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রঙ্গ-রসিকতার ঝড় বয়ে গিয়েছে। এমনকী, ডেটল ও হারপিকের নির্মাতা RB Group শুক্রবার সতর্ক করেছে, কোনওভাবেই যেন শরীরে কীটনাশক ইঞ্জেকশন না দেওয়া হয় বা কেউ যেন তা খেয়ে না ফেলেন।
সদ্য করোনা চিকিৎসার এমন উপায় বাতলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যা শুনে মাথায় হাত বিশেষজ্ঞদের। ট্রাম্পের মতে, অতিবেগুনি রশ্মি ও ঘরোয়াভাবে ব্যবহৃত জীবাণুনাশক শরীরে ঢুকিয়েও করোনা ভাইরাসকে বধ করা যেতে পারে। এই উপায়গুলি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। যার প্রতিক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞরা সাফ জানিয়েছেন, ট্রাম্পের পরামর্শ মানলে মানুষের প্রাণহানিও অসম্ভব নয়।
ট্রাম্পের মন্তব্যের আগেই হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দপ্তরের সচিবের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা উইলিয়াম ব্রায়ান বলেন, “মার্কিন প্রশাসনের বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস বধ করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে অতিবেগুনি রশ্মি। পারে ব্লিচ ও অ্যালকোহলের মতো জীবাণুনাশকও।” তাতেই অতি উৎসাহী হয়ে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এক ঘর সাংবাদিকের সামনে বলে বসেন, “জীবাণুনাশকগুলো ভাইরাসটিকে এক মিনিটের মধ্যে মেরে ফেলে! এক মিনিট! এটা নিয়ে কিছু করার উপায় আছে কি, জীবাণুনাশক ইনজেকশন দিয়ে যা শরীরকে পুরোপুরিভাবে পরিষ্কার করে? করোনা ফুসফুসে আক্রমণ করছে সবচেয়ে বেশি। তাহলে ফুসফুসকে পরিষ্কার করা দিয়েই শুরু করা যেতে পারে। আমার তো খুবই আশাপ্রদ মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটা।”
করোনা রোগীদের প্রাণঘাতী ‘অতিবেগুনি রশ্মি’ দিয়েও চিকিৎসার কথা বলেছেন ট্রাম্প! তঁার প্রস্তাব, আক্রান্তদের শরীরে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে জীবাণুনাশক ঢুকিয়ে দেওয়া বা তাঁদের শরীরে অতিবেগুনি রশ্মি বা অত্যন্ত জোরালো আলো ঢুকিয়ে দেওয়া হলে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। কথাটা বলেই বার বার ব্রায়ানের দিকে তাকান ট্রাম্প। তঁার মন্তব্যে ইঙ্গিত মেলে, তিনি চাইছেন এই সব নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হোক। সেখানে ছিলেন হোয়াইট হাউসের করোনা ভাইরাস টাস্ক ফোর্সের কো-অর্ডিনেটর ডেবোরা ব্রিস্কও। প্রেসিডেন্টের কথা শুনে তিনি যে অবাক হয়ে গিয়েছেন, তার ভিডিও পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
ট্রাম্পের মতামত শুনে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা যে হতাশ, তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি দ্রুত এই মন্তব্য ভাইরাল হয়ে যায় নেটদুনিয়ায়। রসিকতায় মাতেন নেটিজেনরা। মার্কিন চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কীটনাশক বিষাক্ত পদার্থ। শরীরে ঢুকলে বদহজমের সমস্যা হয়। এছাড়া মানব শরীরের ত্বক, চোখ এবং শ্বাসযন্ত্রে ওই বিষের কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। ‘এটা বিপজ্জনক,’ বলেছেন পালমোনলজিস্ট ডা. ভিন গুপ্তা। ‘ক্লোরিন ব্লিচ বা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের সামান্য দ্রবণও শরীরের পক্ষে মারাত্মক হতে পারে’, বলছেন চিকিৎসক জন বামসও। একই সঙ্গে অতিবেগুনি রশ্মির ল্যাম্পের সামনে বেশি ক্ষণ থাকলে যে আমাদের ক্ষতি হয়, গবেষণা তা আগেই দেখিয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র মরতে চাইলেই মানুষ ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করতে পারে।
পাশাপাশি, কড়া বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে লাইজল, ডেটল ইত্যাদি জীবাণুনাশকের প্রস্তুতকারী সংস্থাও। রেকিট বেনকিসার সংস্থা সাফ জানিয়েছে, কোনও পরিস্থিতিতেই তাদের তৈরি কীটনাশক মানবদেহে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ব্যবহার বা খাওয়া যায় না। এগুলি অত্যন্ত বিষাক্ত। যার জেরে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যদিও অনলাইনে রসিকতার জেরে পরিচিত জীবাণুনাশক ব্রান্ডগুলি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.