সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে ফের ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চান ট্রাম্প। মঙ্গলবার একথা জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করব। ভারত এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকও করব। আমি মনে করি তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হবেই।’ ৩৭০ ধারা বাতিলের আগে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। নরেন্দ্র মোদি এই বিষয়ে তাঁকে অনুরোধ করেছেন বলেও দাবি করেছিলেন। যদিও পরে এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে হোয়াইট হাউস। এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি বলেও বিবৃতি দেয়। কিন্তু, ‘হাউডি মোদি’-র আগে এই মন্তব্য করে পুরনো বিতর্ক ফের উসকে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর আমেরিকার হিউস্টনে নরেন্দ্র মোদির জনসভায় যোগ দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জনসভার নাম ‘হাউডি মোদি’। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনদের আয়োজিত এই জনসভায় মোদির যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত থাকলেও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি নিয়ে। কিন্তু, রবিবার রাতেই বিবৃতি জারি করে হোয়াইট হাউস জানিয়ে দিয়েছে, মোদির জনসভায় ট্রাম্প থাকছেন। শুধু তাই নয়।
মার্কিন প্রশাসনিক ভবন আরও জানিয়েছে, “হাউডি মোদি শেয়ার্ড ড্রিমস, ব্রাইট ফিউচার্স-এ দুই রাষ্ট্রনেতার সাক্ষাৎ ভারত এবং আমেরিকাবাসীর মধ্যে একটি মজবুত বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি দু’দেশের বাণিজ্যক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।” এই খবর পাওয়ার পরেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “ট্রাম্প বিশেষ সৌজন্য দেখিয়েছেন। হিউস্টনের সভায় ট্রাম্পকে স্বাগত জানানোর জন্য আমি উদগ্রীব হয়ে রয়েছি।”
প্রসঙ্গত, এর আগে মার্কিন মুলুকে দু’টি জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন মোদি। আর দু’টিতেই তাঁকে ঘিরে উপচে পড়েছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। এর প্রথমটি ছিল ২০১৪ সালে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেনে আর দ্বিতীয়টি ২০১৭ সালে সিলিকন ভ্যালিতে। কিন্তু মনে করা হচ্ছে, আমেরিকার মাটিতে মোদির তৃতীয় জনসভায় জনতার ঢল আগের দু’টিকেই ছাপিয়ে যাবে। জনপ্রিয়তার নিরিখে আরও বড় সাফল্য পাবে। প্রসঙ্গত, ‘হাউডি মোদি’ জনসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে, যেখানে সাকুল্যে ৫০,০০০ দর্শক উপস্থিত থাকতে পারেন। কিন্তু, শেষপর্যন্ত মোদি এবং ট্রাম্প, একসঙ্গে দুই রাষ্ট্রনেতার সাক্ষাৎ পেতে এবং বক্তব্য শুনতে সেই সংখ্যা অচিরেই পেরিয়ে যাবে বলেই অনুমান ওয়াকিবহাল মহলের। একথাও শোনা যাচ্ছে যে জনসভায় উপস্থিত থাকতে দূর-দূরান্ত থেকে পাড়ি দিতে পারেন প্রবাসী ভারতীয়দের একটা বড় অংশ। আবার এর আগে আগস্টে ফ্রান্সে জি-৭-এর ফাঁকে মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প এবং মোদি। এবারের আমেরিকা সফরে গিয়ে মোদি আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মার্কিন মুলুকে থাকবেন বলেই খবর। ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি বক্তৃতা দেবেন রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায়। মোদির পরই সেই সভায় ভাষণ দেওয়ার কথা পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের।
কিন্তু, হিউস্টনের জনসভা থেকে ঠিক কী কী বিষয়ে বার্তা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি? তাৎপর্যপূর্ণভাবে, হিউস্টনের ওই সভায় ৫০ হাজারেরও বেশি ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনদের থাকার কথা, যাদের অধিকাংশই আবার আমেরিকার আগামী নির্বাচনের ভোটার। কাজেই সে কথা মাথায় রেখেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনিরা গত সাত দশক ধরে কীভাবে আমেরিকার সমৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন। দু’দেশের সম্পর্ককে মজবুত করে তোলার বিষয়ে কীভাবে সাহায্য করেছেন। সেটাই ‘হাউডি মোদি’তে তুলে ধরা হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি তাঁদের এ-ও অভিমত যে, ভারত এবং আমেরিকার পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে এই মঞ্চকেই বেছে নিতে চাইছেন মোদি। যা আখেরে দু’দেশের পক্ষেই লাভজনক হবে। এই জনসভা থেকেই বহু প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
‘হাউডি মোদি’তে মোদি এবং ট্রাম্পের উপস্থিতি প্রসঙ্গে আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ‘দুই রাষ্ট্রনেতা একমঞ্চে পাশাপাশি বসে। একই জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। এমনই একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে চলেছে গোটা পৃথিবী। একে শুধুমাত্র দু’দেশের সম্পর্কের ব্যাপার বলে ভাবলে ভুল হবে। এটা আসলে দুই রাষ্ট্রনেতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং রসায়নেরই প্রতিফলন।’
US President Donald Trump: I will see Prime Minister Narendra Modi and I will be meeting with India and Pakistan. I think a lot of progress is being made there. (File pic) pic.twitter.com/ThMkqjzBzC
— ANI (@ANI) September 17, 2019
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.