সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফের একবার হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হবেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা। নির্বাচনে জেতার পরই মনের মতো করে নানা দপ্তর ঢেলে সাজাচ্ছেন ট্রাম্প। এবার আমেরিকার গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান হলেন ‘মোদির বন্ধু’ তুলসী গাবার্ড। এক সময় ডেমোক্র্যাট নেত্রী হিসাবে পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু পরে হাত ধরেন রিপাবলিকান দলের। এবার ট্রাম্প ২.০ সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পেলেন তুলসী।
হাইভোল্টেজ নির্বাচনে ট্রাম্প জিততেই বিভিন্ন প্রশাসনিক পদের দাবিদার নিয়ে নানা জল্পনা চলছিল। ট্রাম্পের পছন্দের তালিকায় নাম ছিল তুলসীরও। বুধবার বিবৃতি দিয়ে নয়া গোয়েন্দা প্রধান হিসাবে এই প্রাক্তন ডেমোক্র্যাটের নাম ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “এক সময় তুলসী গাবার্ড ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য ছিলেন। এখন তিনি রিপাবলিকান। অর্থাৎ দুদলের সমর্থন পেয়েছেন তুলসী। আমি জানি ওঁর ভয়ডরহীন মানসিকতা ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আমাদের গোয়েন্দা দপ্তরকে সমৃদ্ধ করবে। সাংবিধানিক অধিকারকে রক্ষা করার পাশাপাশি শান্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। আমেরিকানদের জন্য অনেক লড়াই করেছেন তুলসী। দেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তুলসীর জন্য আমরা গর্বিত।”
আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে তুলসী বলেন, “আমেরিকার জনগণের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আপনার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য। এই সুযোগ পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি।” এই নির্বাচনে প্রথম থেকেই ট্রাম্পের পাশে ছিলেন তুলসী। ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে’ ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে কুপোকাত করতে রিপাবলিকান নেতা হাতিয়ার করেছিলেন তুলসীকে। ট্রাম্পের বাড়িতে রীতিমত প্র্যাকটিস সেশন চলেছিল।
কে এই তুলসী গাবার্ড? এক সময়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতেই ছিলেন তুলসী। ২০২০ সালে জো বাইডেনের সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে শামিল হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যান। তার পর বাইডেন সরকার ও দলীয় সহকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন তিনি। তাঁর দাবি ছিল, বর্তমান সরকার প্রতিটি ইস্যুতে বর্ণ বিচার করে কাজ করে। শ্বেতাঙ্গ-বিরোধী প্রতিবাদ, বিক্ষোভকে ইন্ধন জোগায়। ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে ‘যুদ্ধবাজ ও বর্ণবিদ্বেষী’ বলেও তোপ দেগেছিলেন।
এছাড়া মার্কিন সেনাতেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তুলসী। ইরাক ও কুয়েতেও মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি ‘হাউস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটি’-তেও দুবছর কাজ করেছেন তুলসী। এইভাবেই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি। এই অভিজ্ঞতা ও সাহসী মনোভাবের জন্য গোয়েন্দা প্রধান হিসাবে ট্রাম্প পছন্দ করেছেন তুলসী। আমেরিকার আইনসভা মার্কিন কংগ্রেসের প্রথম হিন্দু সদস্যও ছিলেন তুলসি। ভগবত গীতায় হাত রেখে শপথগ্রহণ করেছিলেন তিনি। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তুলসীর পরিচয় বহুদিনের। আমেরিকার অনুষ্ঠিত ‘হাউডি মোদি ‘ অনুষ্ঠানের সময় নমোর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল তুলসীর। মোদির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের ছবি হাতিয়ার করে দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমেরিকার একটি মহল ও বেশ কিছু সংবাদপত্র তুলসীকে ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদী’ বলেও কটাক্ষ করে। কিন্তু কোনও কটাক্ষকেই আমল দেননি তুলসী।
দিন তিনেক আগেই নিরাপত্তা পরিষদের প্রধানের দায়িত্ব রিপাবলিকান পার্টির সদস্য মাইক ওয়াল্টজকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। চিনের কট্টর সমালোচক বলে পরিচিত মাইক। ফলে এশিয়ায় বাড়তে থাকা চিনা আগ্রাসন রুখতে এই পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে। একদিকে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অন্যদিকে, ভয়ংকর আকার নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত। তাই আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপর বিশেষ নজরে দিয়েছেন ট্রাম্প। বিশ্ব মানচিত্রে আগামিদিনে আমেরিকাকে আরও শক্তিশালী অঙ্গিকার করেছেন তিনি। এদিকে, সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ট্রাম্পের প্রশাসনে জায়গা করে নিয়েছেন টেলসা কর্তা এলন মাস্ক। ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.