সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গন্ধ শুঁকে লুকিয়ে থাকা আরডিএক্স, বিস্ফোরক খুঁজে দেওয়া তার কাছে কোনও ব্যাপারই নয়। যে কোনও তদন্তকে সঠিক দিশা দেখাতে সারমেয়র অস্ত্র স্রেফ তার ঘ্রাণশক্তি। গন্ধ শুঁকে নিখোঁজ মানুষকে উদ্ধার করতেও তাদের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু চমকপ্রদ বিষয়টি হল, এবার নিজেদের ঘ্রাণশক্তি কাজে লাগিয়েই করোনা আক্রান্ত রোগীকে চিহ্নিত করবে কুকুর।
বিজ্ঞানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কুকুরের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে COVID-19 ভাইরাসকে শনাক্ত করার কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা শুরু করেছে ব্রিটেনের একটি সংগঠন। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তর-পূর্ব লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা শুক্রবার একটি বিবৃতিতে জানান, তাঁরা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিহ্নিত করতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের সাহায্য নিতে চান। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সব অসুখ ও ভাইরাসের নিজস্ব কিছু গন্ধ থাকে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর শরীরের কিছু নমুনার গন্ধ প্রথমে শুঁকতে দিতে হবে কুকুরদের। তারপর তাদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে রোগীদের দ্রুত শনাক্ত করার চেষ্টা করা যেতে পারে। এর আগে ম্যালেরিয়া, ক্যানসার, পার্কিনসন্স ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন আক্রান্ত রোগীদের গায়ের গন্ধ শুঁকে বা তাঁদের শরীর থেকে নেওয়া কোনও নমুনার গন্ধ শুঁকে অসুখ চিহ্নিত করেছে লন্ডনের ওই সংগঠনের প্রশিক্ষিত সারমেয়রা। কুকুরের এই ঘ্রাণশক্তির সাহায্যে অসুখের গন্ধ বিচারের বিষয়টিও তাই এবার ফের কাজে লাগাতে চায় ব্রিটেন।
লন্ডনের মেডিক্যাল ডিটেকশন ডগস সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ক্লেয়ার গেস্টের কথায়, “প্রশিক্ষণ দিলে কুকুর COVID-19 ভাইরাস চিহ্নিত করতে পারবে। এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। তবে কীভাবে সংক্রামিত রোগীর কাছ থেকে ভাইরাস সংগ্রহ করে আমরা নিরাপদে তা কুকুরের সামনে তুলে ধরব, এখন সেটাই দেখার। আমাদের লক্ষ্য, কুকুরকে এমনভাবে ট্রেনিং দেওয়া যাতে তারা করোনা রোগীর পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় থাকা রোগীকেও চিহ্নিত করতে পারে। এর ফলে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসও উপকৃত হবে।”
সংগঠনের কর্মকর্তাদের দাবি, সারমেয়দের করোনার গন্ধ বিচারের জন্য আগামী ছ’সপ্তাহ বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হবে। তারপরই তারা মহামারির আকার নেওয়া এই অসুখকে প্রতিহত করতে তাদের কাজে লাগানো শুরু করবে। বিজ্ঞানীদের দাবি, কুকুর গন্ধ শুঁকে নির্ভুল শনাক্ত করে। এক্ষেত্রেও তারা পারদর্শী হয়ে উঠলে তাদের রোগীদের গায়ের গন্ধ শুঁকিয়ে দেখানো হবে। এর ফলে কোনও ইঞ্জেকশন বা অন্য কোনও কিটের সাহায্যে করোনা ভাইরাস চিহ্নিত করার দরকারও পড়বে না।
ইতিমধ্যেই ব্রিটেনে হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ১২ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত এই দেশে। মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫৭৮। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন থেকে রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স চার্লস থেকে স্বয়ং এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত। এদিকে এর মধ্যেই করোনা টেস্টের কিটের অভাব দেখা দিয়েছে ব্রিটেনে। এই অবস্থায় সারমেয়কুলের ঘ্রাণশক্তি কাজে লাগানো গেলে তা নজির গড়বে। সারা বিশ্বেই করোনা ছড়িয়েছে। বহু জায়গায় কিটের অভাবে সময়মতো অসুখ নির্ধারণ করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছে না। তার চেয়েও বড় কথা, উপসর্গ দেখা দেওয়ার বেশ কিছুদিন পর মানুষ টেস্ট করতে যাচ্ছেন। তখন তাঁদের শারীরিক অবস্থার অনেকটাই অবনতি ঘটে যায়। কুকুরের ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমে করোনাকে চিহ্নিত করা গেলে এই ভয়ানক অবস্থা থেকে অনেকটাই সুরাহা হতে পারে বলে আশা বিজ্ঞানীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.