সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাকিস্তানের মন রাখতে গিয়ে এবার ভারত বিরোধী অবস্থান নিল সৌদি আরব। মুসলিম দেশগুলির সংগঠন অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি)-র সম্মেলনে এই প্রথম কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে বিশদে আলোচনা করা হবে বলে জানাল সৌদি আরব। পাকিস্তানের অনেক দিনের দাবি ছিল, কাশ্মীর ইস্যু, ৩৭০ ধারা বিলোপ, ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ওআইসি’র সভায় আলোচনা হোক। কিন্তু সোদি, আরব আমিরশাহি-সহ মুসলিম দেশগুলির সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরে খুব ভাল হওয়ায় পাকিস্তানের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছিল।
এবার পাকিস্তান সফল হয়েছে। শুধুমাত্র জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ইসলামি দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের নিয়ে বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করতে চলেছে সৌদি আরব। ভারতের পক্ষে এটি দুঃসংবাদ। গত সপ্তাহে ইসলামাবাদ সফরে গিয়েছিলেন সৌদির বিদেশমন্ত্রী যুবরাজ ফয়জল বিন ফারহান আল-সৌদ। সেখানে পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির সঙ্গে দেখা করে কাশ্মীর নিয়ে কথা বলেছেন।
ফারহান এবং কুরেশির বৈঠকের পর পাক বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দেয়, ‘বৈঠক চলাকালীন জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি-সহ সাম্প্রতিককালে ভারত সরকারের নেওয়া একাধিক সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন কুরেশি। কীভাবে বেছে বেছে ভারতে মুসলিমদের নিশানা করা হচ্ছে, তা-ও তুলে ধরা হয়। ভারতে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতির দিকে নজর রয়েছে ওআইসি-র জেনারেল সেক্রেট্ারিয়টের। বিতর্কিত নাগরিক আইন এবং বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন তারা। ভারতে মুসলিমদের এবং মসজিদগুলির নিরাপত্তা রক্ষায় যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা স্পষ্ট জানিয়েছে ওআইসি।’
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার ডাকা ইসলামি দেশগুলির বৈঠক বয়কট করে ইসলাম দুনিয়ার স্বঘোষিত অবিভাবক সৌদি আরব। ওই বৈঠকে মুসলিম দেশগুলিকে নেতৃত্ব দেয় তুরস্ক, মালয়েশিয়া এবং ইরান। এর মধ্যে তুরস্ক ও ইরান হল সৌদি আরবের জাতশত্রু। আবার প্রায় দেউলিয়া পাকিস্তান আর্থিক দিক থেকে সৌদির উপর নির্ভরশীল। ফলে সৌদি রাজপরিবার হুমকির সুরে ইমরান খানের সরকারকে সাফ জানায়, ওই বৈঠকে পাকিস্তান যোগ দিলে ফল ভাল হবে না। সৌদি কিন্তু পাকিস্তানের পাশ থেকে সরে যাবে। সৌদি চায় না পাকিস্তান কোনও সৌদি বিরোধী শিবিরে যোগ দিক। ফলে আর্থিক নিরাপত্তার কারণেই ভয়ে পিছিয়ে যান ইমরান। কিন্তু তিনি একটি শর্ত জুড়ে দেন। তা হল, কাশ্মীর নিয়ে ওআইসি’র বৈঠকে ভারতের বিরুদ্ধে একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে। সৌদি বিদেশমন্ত্রী তখনই পাকিস্তানের কুরেশির শর্তে রাজি হয়ে যান। মালয়েশিয়ার ডাকা ইসলামি দেশগুলির বৈঠক থেকে পাকিস্তানকে সরে আসতে বাধ্য করেছিল সৌদি আরব। তারই পাল্টা হিসাবে কাশ্মীর নিয়ে ইসলামাবাদ চাপ সৃষ্টি করায় রিয়াধ তা মেনে নিয়েছে।
কয়েকজন ভারতীয় কূটনীতিকের মত, ভারত হল সৌদির তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ভারতকে চটিয়ে সৌদি বড় কোনও পদক্ষেপ করবে না। সেটা করলে আত্মহত্যার শামিল হবে। তাতে বিপুল ক্ষতি সৌদিরই। কারণ ওরা ভারতে হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চলেছে। ফলে ওআইসি’র বৈঠকে কাশ্মীর ইস্যু তুললেও তা হবে নেহাতই রাজনৈতিক সৌজন্যমূলক এবং পাকিস্তানের বায়নাক্কা সামাল দেওয়ার জন্যই। তার জন্য ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষতি করার মতো মূর্খামি সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন করবেন না। শুধু তাই নয়, কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠলে ভারতের দুই বন্ধু দেশ আরব আমিরশাহি ও বাংলাদেশ ভারতের পক্ষ নিয়ে আগের মতোই পাকিস্তানের বিরোধিতা করতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.