সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শনিবার মরণবাঁচন পরিস্থিতি ইমরানের। এদিন সকালের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা, ইমরান মসনদে থাকবেন কিনা। পরিস্থিতি যা, গদি বাঁচানো প্রায় অসম্ভব তাঁর। আর এই বিদায়বেলায় ভারতের ঢালাও প্রশংসা ইমরানের মুখে। তিনি বলেছেন, ”স্বাভিমান কাকে বলে তা ভারতের থেকে শিখুক পাকিস্তান। কোনও সুপার পাওয়ার দিল্লির উপরে হুকুম চালাতে পারে না।” তাঁর কথা থেকে পরিষ্কার, তিনি তাঁর পদ হারানোর জন্য আমেরিকাকেই কাঠগড়ায় তুলছেন। এদিকে তাঁর অনুরাগীদের পথে নামার আহ্বানও জানিয়েছেন ইমরান।
অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে ইমরান খানই (Imran Khan) হবেন অনাস্থা ভোটে বিদায় নেওয়া পাকিস্তানের (Pakistan) প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী। এর আগে দুই প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েও টিকে যান। সেনা হস্তক্ষেপের দীর্ঘ ইতিহাস থাকা পাকিস্তানে কোনও প্রধানমন্ত্রীই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তবে ইমরানকে বিদায় নিতে হচ্ছে পার্লামেন্টে আনা অনাস্থা ভোটে। সেদিক দিয়ে বিচার করলে পাক জনতা শনিবার নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে, এমনটা বলাই যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। রায় অনুসারে শনিবার পাক সংসদের নিম্নকক্ষের অধিবেশন ডাকতে বাধ্য জাতীয় পরিষদের স্পিকার। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই এই অধিবেশন শুরু করতে হবে। এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর ইমরান জানান, দেশের জন্য তিনি শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।
শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার আগে ইমরান জানিয়ে দেন, তিনি ইস্তফা দিতে চান না। গণতন্ত্র রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যেতে চান। পরে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ইমরান বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমি হতাশ। আমার সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করেছিলেন ডেপুটি স্পিকার। তা সত্ত্বেও জাতীয় সংসদ পুনর্বহাল করার আদেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। অন্তত বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আদালতের খতিয়ে দেখা উচিত ছিল।”
বিরোধীরা ব্যাপক সাংসদ কেনাবেচা করছে বলে অভিযোগ করেন ইমরান। তাঁর প্রশ্ন, কোন দেশের গণতন্ত্র এমন ঘটনা অনুমোদন করে? সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি দেখা উচিত বলেও জানান তিনি। এদিকে, অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের বিদায় নিশ্চিত ধরে নিয়ে সম্ভাব্য নতুন ফেডারেল সরকার গঠনের আলোচনা শেষ করেছে বিরোধী জোট। জানা যাচ্ছে,নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ।
গত ৩ এপ্রিল ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। পরে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। ওই দিনই এ নিয়ে সুয়োমোটো শুনানি গ্রহণ করেন সর্বোচ্চ আদালত। পাঁচ দিনের শুনানি শেষে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সর্বসম্মত রায় দেন প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ।
কেন সর্বোচ্চ আদালত এ পথে হাঁটল? প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার। আইন অনুযায়ী তাঁর এ ধরনের ক্ষমতা নেই। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। পাকিস্তানে পার্লামেন্ট পুনর্বহালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর থেকেই উল্লাসে মেতেছে ইমরান-বিরোধী শিবির। একে গণতন্ত্রের বিজয় হিসাবে দেখছে তারা। শুক্রবার বিশেষ সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিজয় উদ্যাপনের ঘোষণা করেছে তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.