ফাইল চিত্র।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) চিন-প্রীতি অজানা কিছু নয়। করোনা ভাইরাসের উৎসস্থল যে চিনের ইউহান, তা একপ্রকার নিশ্চিত হলেও বেজিংয়ের পক্ষেই বারবার সওয়াল করে গিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রিয়েসুস (Tedros Adhanom Ghebreyesus )। কিন্তু এবার সেই মধুচন্দ্রিমা হয়তো শেষ। কারণ, আন্তর্জাতিক সংস্থাটির করোনা বিশেষজ্ঞ দলটিকে দেশে ঢুকতেই দিল না চিন। ফলে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঘেব্রিয়েসুস।
বছরখানেক আগে চিনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী ইউহান থেকেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। এনিয়ে আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ একাধিক দেশ বারবার চিনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তবে নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ চিন। ইউহানকে করোনার উৎসস্থল হিসেবে কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না কমিউনিস্ট দেশটি। এহেন পরিস্থিতিতে সেই সব বিষয়ে তদন্ত করে দেখতে জানুয়ারির গোড়াতেই ১০ জনের বিশেষজ্ঞ দলের যাওয়ার কথা ছিল ইউহানে। এমনকি, দলের দুই সদস্য চিনের উদ্দেশে রওনা দিলেও তাঁদের বেজিংয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে হু। এই বিষয়ে আচমকা সুর বদল করে চিনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘেব্রিয়েসুস বলেন, “আমরা আজ (বুধবার) জানতে পেরেছি যে, চিনের আধিকারিকরা বিশেষজ্ঞ দলের যাওয়ার অনুমতি দেয়নি চিন। বেজিংয়ের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়ে দিয়েছি, এই মিশন হু-এর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিনের এহেন পদক্ষেপে আমি অত্যন্ত হতাশ।”
চিনে এই আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন WHO-এর পশু-পাখির রোগ বিশেষজ্ঞ পিটার বেন এমবারেক। গত জুলাই মাসেও চিনে গিয়ে অনুসন্ধান করে এসেছেন তিনি। কিন্তু সেটা ছিল মূল মিশনের প্রাক মিশন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের প্রধান মাইকেল রায়ান জানিয়েছেন, মঙ্গলবারই এই প্রতিনিধি দলের সদস্যদের রওনা দেওয়ার কথা ছিল। দুই সদস্য ইতিমধ্যেই রওনা দিয়েছিলেন চিনের উদ্দেশে। কিন্তু শেষমুহূর্তে বেজিং অনুমতি না দেওয়ায় এক জন ফিরে এসেছেন। আর এক জন অন্য দেশে গিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ করোনা মহামারীর জন্য চিনকে দায়ী করে আসছে। আর সেই অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, তা প্রমাণ হয়েছে একাধিক গোপন নথি ফাঁস হওয়ায়। কয়েকদিন আগে চিনে করোনা মহামারী নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে CNN। সেখানে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের রিপোর্টের ভিত্তিতে দাবি করা হয় যে, প্রথমদিকে করোনা সংক্রমণের কথা গোপন রেখেছিল হুবেই প্রশাসন। স্থানীয় চিকিৎসকদের মতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত হুবেইয়ে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৯১৮। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যানে এর অর্ধেক দেখানো হয়েছিল। ফলে, কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। বলে রাখা ভাল, ২০১৯ সালের নভেম্বরে চিনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী ইউহান শহরে প্রথম করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ‘Hubei Provincial Centre for Disease Control and Prevention’-এর এক কর্মীর কাছ থেকে ১১৭ পাতার একটি গোপন রিপোর্ট সংগ্রহ করে CNN। তারপর অন্তত ছ’জন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সেই নথি খতিয়ে দেখে সেগুলির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে বলে দাবি সংস্থাটির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.