প্রদীপ্ত রায়, ডালাস: দু’সপ্তাহ হল বাড়ি থেকে কাজ করছি। নোভেল করোনাভাইরাস সেইভাবে এখনও ছুঁতে পারেনি আমাদের শহরটাকে। নিউ ইয়র্ক এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকাকে যেভাবে গ্রাস করেছে। ওখানে ২৫হাজার মানুষ আক্রান্ত। শুনলাম, ঘণ্টায় একজনের শরীরে সংক্রামিত হচ্ছে করোনা। পরিসংখ্যান দেখে টেক্সাসের এই প্রান্তে আমরাও ভয়ে ভয়ে আছি। সবার অজান্তে কখন যে ভয়ংকরভাবে থাবা বসাতে চলেছে রোগটা, কেউ জানে না।
মঙ্গলবার থেকে প্রশাসনের তরফে নির্দেশ এসেছে বাড়িতে থাকার। জরুরি কাজ না থাকলে বাইরে যাওয়া নিষেধ। তবে ভারতের মতো লকডাউন সিচুয়েশন তৈরি হয়নি এখনও। যদিও এই সপ্তাহ থেকে রাস্তাঘাট শুনশান। ট্রাফিকের চাপ নেই। গাড়ি চলছে দ্রুত। করোনা যেন এখানে সেভাবে অ্যাটাক না করে, এটাই চাইব।
[ আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণে চিন, ইটালিকে হারাল আমেরিকা, লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা ]
ডালাসের মানুষ খুব কম পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে। নিউ ইয়র্কের দিকে সাবওয়ে বা বাসে, ট্রামে তবু ভিড় থাকে। এখানে তেমন নয়। কারণ, দূরত্বের কারণে ডালাসে সবাই নিজেদের গাড়িতেই এদিক ওদিক যায়। তাই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থেকে করোনা ছড়ানোর ভয় কম। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ রোজের খাবার জোগাড় করা। কারণ, বাড়ির পাশে যে ওয়ালমার্ট, সেটা ফাঁকা। আবার একদিন ৩০ মাইল দূরে গেলাম গাড়ি চালিয়ে। সেখানেও একই অবস্থা। অত বড় ওয়ালমার্টে এক প্যাকেট মাংস পড়ে আছে। বাকি ডিম-দুধ-মাছ কিচ্ছু নেই।
এখন তো আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) বলছে, চিন-ইতালির পর COVID-19-এর নেক্সট এপিসেন্টার আমেরিকা। এটা আগেই ঘোষণা করতে পারত। কারণ, আমি কিছুদিন আগেও দেখেছি, এখানকার মানুষজন পার্টি করছে। ডিনারে যাচ্ছে। পার্কে ঘুরছিল। কারও মনে কোনও ভয়ডর নেই। সেই সঙ্গে আরও একটা বিষয় উল্লেখ করার মতো। আগে থেকে বিমানবন্দরগুলোতে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যপারটার উপরও জোর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা হয়নি মনে হয়। প্রশাসনিক স্তরে কোথায় ফাঁক ছিল, সেটা এখন বলার সময় নয়। সামনের দুর্যোগের দিনে সবার একসঙ্গে থাকাটা খুব জরুরি।
আমেরিকা নিঃসন্দেহে অনেক বড় দেশ। উন্নত দেশ। তবে এই আমেরিকাতেও কিন্তু গরিব আছে। যাঁরা মাস মাইনেতেই চালান। তেমন কোনও সেভিংস নেই। তাঁদের করোনার মতো কিছু হলে এদেশে হেলথ সার্ভিস অ্যাকসেস করা কঠিন হবে।
এখন বড় চিন্তা নিজের দেশের মানুষগুলোর জন্য। মা-বাবার জন্য। আমরা এমন একটা অবস্থায় পৌঁছেছি, যেখানে চাইলেও দেশে ফিরতে পারব না। আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা বন্ধ। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তার অপেক্ষায়।
(লেখক: রিসার্চ সায়েন্টিস্ট, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.